শনিবার, ২৯ অক্টোবর, ২০১৬

সৃষ্টিতত্ত্ব ভাগবত চার

এভাবে হিসাব করলে দেখা যায় আমাদের পার্শ্ববর্তী ব্রহ্মান্ডের আবরণের বিস্তৃতি আমাদের চেয়ে একটু বেশী কারণ আমাদের নিকটতম ব্রহ্মান্ডটি ৫গুণ আর আমাদের ব্রহ্মান্ডটি ৪গুণ সুতরাং আমাদের চেয়ে কিছুটা বড় সেজন্য সেটির আবরণ আমাদের চেয়ে আরো একটু পুরু হইবে।

আন্তঃনাক্ষত্রিক মহাজাগতিক পদার্থ (Interstellar Galactic Material)দুইটি নক্ষত্র বা ছায়াপথের (Milky Way) মাঝে বিজ্ঞানীরা বিশাল বিশাল জায়গা শূন্যস্থান দেখতে পাইতেছেন ।এ জায়গাগুলি ধূলিবালিসহ বিভিন্ন তরল ও গ্যাসীয় পদার্থ দ্বারা ভর্তি,বিজ্ঞানীরা মনে করছেন,দুইটি ছায়াপথের মাঝের আয়তন এত বেশী যাহা ছায়াপথ বা নক্ষত্রের নিজের আয়তন থেকে অনেক বেশী।এই জন্য Interstellar Galactic Material কে তাহারা অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করছেন ।বিজ্ঞানীরা যাহাকে আন্তঃনাক্ষত্র্রিক মহাজাগতিক পদার্থ বলছে ভাগবতের বর্ণনা অনুসারে সেটা হল ব্রহ্মান্ডের আবরণ এই আবরণ জল, আগুন, বায়ু, আকাশ (ইথার),মহতত্ত্ব ইত্যাদি দ্বারা গঠিত।সেজন্য ইহাকে ধূলাবালি পূর্ণ অসম বলিয়া মনে হয় ।ব্রহ্মান্ডের আবরণের দৈর্ঘ্য উক্ত ব্রহ্মান্ডের ব্যাসের ১ কোটি ১১ লক্ষ গুণ বড়।সুতরাং ব্রহ্মান্ডের নিজস্ব আয়তন থেকে আবরন অনেক বড়, সেটাই বিজ্ঞানীরা প্রতিপন্ন করেছেন ।তারা বলছেন আন্তঃনক্ষত্রিক জাগতিক পদার্থের পরিমান অনেক বেশি ।

বিজ্ঞানীরা মনে করেন,আদিম মহাবিশ্ব সম্ভবত অত্যন্ত বিশৃংঙ্খলা এবং নিয়ম বিহীন অবস্থায় ছিল । বিজ্ঞানী সমাজের ধারনা মহাবিশ্ব যদি সত্যিই স্থানিকভাবে অসীম হয় কিংবা মহাবিশ্বগুলির সংখ্যা যদি অনন্ত হয় তা হলে সম্ভবত কোন স্থানে এমন কতগুলি বৃহৎ অঞ্চল থাকবে যেগুলো হয়েছিল মসৃণ-সমরূপভাবে । ব্যাপারটা অনেকটা সেই বহূ পরিচিত বাঁদরের বিরাট দলের মত । তাহারা টাইপরাইটারের আঙ্গুল ঠুকিয়ে চলিয়াছে – যাহা ছাপা হচ্ছে তাহার বেশির ভাগটাই ভূষিমাল কিন্তু দৈবাৎ তারা শেক্সপিয়ারের একটি সনেটও টাইপ করিয়া ফেলিতে পারে । তেমনিভাবে মহাবিশ্বের ক্ষেত্রে এমন কি হতে পারে যে আমরা এমন একটি অঞ্চলে রয়েছি যেটা ঘটনাচক্রে মসৃন এবং নিয়মবদ্ধ ? আপাতদৃষ্টিতে ব্যাপারটি খুবই অসম্ভব মনে হতে পারে কারণ ওই রকম মসৃণ অঞ্চলের চাইতে বিশৃঙ্খল এবং নিয়মবিহীন অঞ্চলের সংখ্যা অনেক বেশি । কিন্তু যদি অনুমান করা যায় মসৃন অঞ্চলগুলিতেই নীহারিকা এবং তাঁরকা গঠিত হয়েছে এবং এই সমস্ত অঞ্চলেই আমাদের মত আত্মজ (self replicating) সৃষ্টি করিতে সক্ষম জটিল জীব বিকাশের মতো সঠিক পরিস্থিতি রয়েছে এবং এই জীবরাই প্রশ্ন করতে সক্ষম মহাবিশ্ব এরকম মসৃণ কেন ?এটা হইল যাহাকে নরত্বীয় নীতি (anthropic princple) বা মানবতত্ত্ব নীতি বলে ।

বিজ্ঞানীরা এই আলোচনা থেকে প্রতিপন্ন করা যায় মহাবিশ্ব যদি অসীম হয় এবং ব্রহ্মান্ডের সংখ্যা অনন্ত হয় তা হলে বৃহৎ বৃহৎ মসৃণ সমরূপ অঞ্চল থাকবে । বিজ্ঞানীদের এই মতবাদের সাথে ভাগবত একমত । কারণ ভাগবতে বর্ণনা করা হয়েছে ব্রহ্মান্ডের সংখ্যা অনন্ত কোটি এবং প্র্রত্যেকটি ব্রহ্মান্ডে গ্রহ নক্ষত্র সজ্জিত সুশৃঙ্খল সৌর পরিবার রয়েছে । প্রতিটি ব্রহ্মান্ডে একটি সূর্য ব্রহ্মান্ডের মাঝখানে অবস্থান করিয়া সম্পূর্ণ ব্রহ্মান্ডকে তাপ ও আলোক প্রদানের মাধ্যমে জীবিত রেখেছে এবং প্রতি ব্রহ্মান্ডে আমাদের চেয়ে অধিক বুদ্ধিমান মানুষসহ ৮৪ লক্ষ প্রজাতির জীব রয়েছে । সুতরাং দেখা যাচ্ছে বিজ্ঞানীদের এই ধারনার সাথে ভাগবতের মিল আছে । এই আলোচনার অন্য অংশে বর্ণনা করা হয়েছে কতগুলি বানর টাইপ করতে করতে ঘটনাচক্রে যেমন শেক্সপিয়ারের একটি সনেট কবিতা টাইপ করতে পারে ঠিক সেইরকম কোন ঘটনা চক্রে এই মহাবিশ্বে মসৃণ অঞ্চলের সৃষ্টি হয়েছে ফলে মানুষের মত বুদ্ধিমান জীবের সৃষ্টি সম্ভব হয়েছে।ভাগবত এই অংশের তীব্র প্রতিবাদ করয়া বলেছে এই মহাবিশ্বে কোন কিছু ঘটনা চক্রে হঠাৎ ঘটে নাই সকল সৃষ্টির পিছনে সৃষ্টিকর্তার সুনির্দিষ্ট নিয়ন্ত্রন রহিয়াছে ।

অনন্ত কোটি ব্রহ্মান্ডে সুশৃংঙ্খল সাজানো পরিবেশ রয়েছে যস্য প্রভা প্রভবতো জগদন্ডকোটিকোটিষবশেষবসুধাদিবিভূতিভিন্নম্ । তদ্ ব্রহ্ম নিষ্কলমনন্তমেষভ ূতং গোবিন্দমাদিপুরুষং তমহং ভজামি ।।(ব্রহ্ম- সংহিতা ৫/৪০) অনুবাদ অনন্তকোটি ব্রহ্মান্ডে অনন্ত বসূধাদি বিভূতির দ্বারা যিনি ভেদপ্রাপ্ত হইয়াছেন, সেই পূর্ণ, নিরবিচ্ছিন্ন এবং অশেষভূত ব্রহ্ম যাঁহার প্রভা, সেই আদিপুরুষ গোবিন্দকে আমি ভজনা করি । অনন্তকোটি ব্রহ্মান্ডের প্রতিটি ব্রহ্মান্ডই বিভিন্ন আকৃতি এবং পরিবেশ সমন্বিত অসংখ্য গ্রহ নক্ষত্রে পূর্ণ । সে সমস্ত প্রকাশিত হয়েছে অনন্ত অদ্বয়-ব্রহ্ম থেকে, যাহা পূর্ণ জ্ঞানে বিরাজমান । সেই অন্তহীন ব্রহ্মজ্যোতির উৎস হচ্ছে, পরমেশ্বর ভগবান শ্রীগোবিন্দের চিন্ময় দেহ এবং সেই গোবিন্দই আদি পুরুষরূপে বন্দিত হয়েছেন।

এখানে বর্ণনা করা হয়েছে ব্রহ্মান্ডের সংখ্যা অনন্তকোটি এবং প্রতিটি ব্রহ্মান্ডের সুনির্দিষ্ট সজানো গোছানো সুন্দর পরিবেশ রয়েছে যা জীব বসবাসের উপযুক্ত এবং ব্রহ্মান্ডগুলি ভগবাণের নি

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন