বৈদিক দর্শনের আত্মাবাদের সাথে বৌদ্ধ দর্শনের আত্মাবাদের আলোচনা
- সাধনাজ্যোতি ভিক্ষু
বি, এ (অর্নাস) এম, এ (সি, ইউ) এম, এড (ডি,ইউ)
ভূমিকা ঃ সাধারনত আত্মা বলতে দেহাতিরিক্ত কোন অজড় নিত্য দ্রব্যের ধারণা করা হয়। চৈতন্য
যার স্বাভাবিক গুণ। এই আত্মার জন্য জ্ঞাতা, কর্তা ও ভোক্তা। এই আত্মার অস্তিত্বের জন্য ব্যক্তি অভিন্নতা সুচিত হয়। ভারতীয় দর্শনে আত্মা এবং মন সমার্থক শব্দ নয়। আত্মা মন থেকে ভিন্ন এক সত্তা। মন হল অন্তরিন্দ্রিয় যার সাহায্যে আত্মা বিভিন্ন মানসিক অবস্থা গুলো প্রত্যক্ষ করে। নিম্নে বৈদিক দর্শনের ও বৌদ্ধ দর্শনের আত্মাবাদের আলোচনা করা গেল ঃ
বৈদিক দর্শন ঃ বৈদিক দর্শন বলতে আমরা বেদের সমর্থন পুষ্ঠ ষড়দর্শনকে বুঝি আর এগুলোকে আস্তিক দর্শনও বলা যায়। এগুলো হচ্ছে- ন্যায়, বৈশেষিক, মীমাংসা, সাংখ্য, যোগ ও বেদান্ত।
ন্যায় মত ঃ নৈয়ায়িকদের মতে, আত্মা হল দ্রব্য এবং এই দ্রব্যকে আশ্রয় করে চেতনা থাকে। আত্মা হল জ্ঞাতা, কর্তা ও ভোক্তা। দেহ, ইন্দ্রিয়, মন সবগুলো আত্মা করন: যে গুলো আত্মার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। আত্মা, দেহ, বাহ্য, ইন্দ্রিয় এবং মনের অতিরিক্ত এক স্বতন্ত্র সত্ত্বা। চৈতন্য আত্মার স্বাভাবিক বা অবিছেদ্য গুণ নয়। আত্মা স্বরুপতঃ অচেতন ও নিষ্ক্রিয়। আত্মা যখন মনের সঙ্গে, মন ইন্দ্রিয়ের সঙ্গে এবং ইন্দ্রিয় বাহ্যুবস্তুর সঙ্গে সম্বন্ধযুক্ত হয়। তখন আত্মার আবির্ভাব ঘটে। নিষ্ক্রিয় বা নির্গুণ আত্মা, ভোক্তারুপে সব কিছু ভোগ করে। আত্মা স্বরুপতঃ অচেতন দ্রব্য এবং মোক্ষ অবস্থায় আত্মা নিজ স্বরুপে অবস্থান করে।
বৈশেষিক মত ঃ বৈশেষিকদের মতে, আত্মা সম্পর্কীয় নৈয়ায়িকদের ধারণা অনুরুপ। আত্মা হল এক শ্বাশত এবং সর্বব্যাপী দ্রব্য। আত্মা হল জ্ঞান বা চেতনার আশ্রয়। আত্মা বিভূ হলেও শরীল ভেদে ভিন্ন ভিন্ন। আত্মা নিত্য, আত্মার কোন বিনাশ নেই। আত্মা স্বরুপত অচেতন, কিন্তু দেহের সংস্পর্শে এসে আত্মা চেতনা লাভ করে। যেহেতু আত্মা স্বরুপতঃ নির্গুণও নিষ্ক্রিয় সে কারণে চৈতন্য আত্মার স্বাভাবিক গুন নয়, আগন্তুকও নয়।
মীমাংসক মত ঃ মীমাংসকদের মতে, আত্মা, দেহ, মন ও বুদ্ধি ভিন্ন এক স্বতন্ত্র সত্ত্বা। প্রভাকর মিশ্র ও কুমারিল ভট্ট উভয়ের মতে, আত্মা একটি দ্রব্য তবে প্রভাকরের মতে, আত্মা নিগুর্ন ও নিষ্ক্রিয়। চৈতন্য আত্মার স্বাভাবিক ধর্ম নয়, কিন্তু কুমারিলের মতে, চৈতন্য আত্মার স্বাভাবিক ধর্ম। প্রভাকর মীমাংসকদের মতে, আত্মা জ্ঞাতা, সেহেতু আত্মা জ্ঞেয় হতে পারে না তবে বিষয়ের উপলদ্ধির সময় জ্ঞাতারুপে আত্মা জ্ঞাতারুপে আত্মার উপলদ্ধি ঘটে। ভট্ট মীমাংসকদের মতে, প্রতিটি বিষয়ের উপলদ্ধির সঙ্গে আত্মা জ্ঞাতারুপে প্রকাশিত হয় না। কেবলমাত্র আত্মা সচেতনার ক্ষেত্রে আত্মা বিষয় রুপে উপলদ্ধি হয়।
সাংখ্য ও যোগ মত ঃ সাংখ্য ও যোগ দর্শনমতে, আত্মা, দেহ, মন, ইন্দ্রিয় বুদ্ধি বা জড়জগতের কোন বস্তু নয়। আত্মা প্রকাশ চৈতন্য স্বরুপ। আত্মা চৈতন্য গুন বিশিষ্ট দ্রব্য নয়। চিৎ বা জ্ঞান আত্মার ধর্ম বা গুণ নয়, আত্মাই চিৎ স্বরুপ বা জ্ঞানস্বরুপ। আত্মা নিত্য, অপরিনামী, নির্গুণ ও নিষ্ক্রিয়। সাংখ্য ও যোগ দর্শন মতে, আত্মা চিত্তবৃত্তি থেকে স্বতন্ত্র এক আধ্যাত্মিক।
বেদান্ত মত ঃ অদ্বৈতবেদান্ত মতে, আত্মা বিশুদ্ধ চৈতন্য স্বরুপ, নিরবয়ব বা নিরংশ। আত্মা নির্বিশেষ, নিত্য, অখন্ড, আদি ও অন্তহীন, আত্মার বহুত্ব সম্ভব নয়। ব্যবহারিক দৃষ্টিতে আত্মা বহু, কিন্তু পরমার্থ দৃষ্টিতে আত্মা এক। পরমাত্মাই ব্রহ্ম। এক ব্রহ্ম মায়া প্রভাবে নানা উপাধিযুক্ত হয়ে জীবত্মারুপে প্রতিভাত হয়।
বৌদ্ধ দর্শন ঃ বৌদ্ধ দর্শন মতে, আত্মা অভিজ্ঞতাবাদী বৌদ্ধ দার্শনিকগণও কোন শ্বাশত বা চিরন্তন আত্মার অস্তিত্ব স্বীকার করে না। কোন এক মহুর্তে আমাদের মধ্যে আমরা যে সব মানসিক প্রক্রিয়া গুলো দেখি সে সব মানসিক অন্তরালে কোন শাশ্বত বা চিরন্তন সত্তার আস্তিত্ব নেই। মানুষের মধ্যে কোন অপরিবর্তনীয় সত্তার অস্তিত্ব না থাকলেও মানুষের জীবনের বিভিন্ন অবস্থার মধ্যে একটা ধারাবাহিকতা আছে, তার দ্বারা ব্যক্তি অভিন্নতা ব্যাখ্যা করা চলে। শ্বাশত আত্মার স্বীকার না করেও বুদ্ধ জন্মান্তর অর্থে কোন চিরন্তন অর্থে বর্তমান জীবন থেকে পরবর্তী জীবনের উদ্ভব। জীব হল মানসিক প্রক্রিয়ার প্রবাহ। এই মানসিক প্রক্রিয়া এক জন্ম থেকে আর এক জন্মে প্রবাহিত হয়। মানুষ পঞ্চস্কন্ধের সৃষ্টি এই পঞ্চস্কন্ধ হল- রুপ, বেদনা, সংজ্ঞা, সংস্কার এবং বিজ্ঞান।
বুদ্ধমতে, যারা শ্বাশত অখন্ড আত্মার কথা বলেন তারা মূলতঃ পঞ্চস্কন্ধকে একত্রে বা কোন একটিকে প্রত্যক্ষ করে শ্বাশত আত্মার কথা বলে থাকেন।
আত্মা সম্পর্কে ভারতীয় দর্শন সম্প্রদায়ের বিভিন্ন মতামতের সমালোচনায় বলা যায়, নৈয়ায়িক ও বৈশেষিকদের আত্মা সম্পর্কীয় ধারণা সন্তোষ জনক নয়। তাদের মতে আত্মা, স্বরুপতঃ অচেতন এবং নির্গুণ, কিন্তু এই ধারণা যুক্তিযুক্ত নয়। কেননা আত্মা যদি স্বরুপতঃ অচেতন হয় তাহলে আত্মার সঙ্গে জড়বস্তুর পার
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন