মঙ্গলবার, ৩১ জানুয়ারী, ২০১৭

ধারাবাহিকতা

ধর্মগ্রন্থ হচ্ছে সেই সকল বিশেষ গ্রন্থ যাতে
মানুষের জীবন যাপনের বিধান , ভাল কাজ করার পরামর্শ এবং মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকতে নিষেধ করা হয়েছে । পৃথিবীতে যুগে যুগে আসা সকল
ধর্মেরই কোন না কোন ধর্মগ্রন্থ বা শাস্ত্রবিধান রয়েছে । যেমন মুসলমানদের আল কুরআন , হিন্দুদের
বেদ, খ্রিস্টানদের বাইবেল , বৌদ্ধদের ত্রিপিটক ,
ইহুদিদের তওরৎ ইত্যাদি ।
ইহুদি ধর্মগ্রন্থ
হিব্রু বাইবেল
হিব্রু বাইবেলের পাণ্ডুলিপি (একাদশ শতাব্দী)
হিব্রু বাইবেল ( Hebrew Bible ) বলতে ইহুদি ও
খ্রিস্টানদের ধর্মীয় পুস্তকাবলীর সাধারণ অংশকে বোঝায়। পণ্ডিতেরা খ্রিস্টানদের পুরাতন বাইবেল ( Old Testament) বা ইহুদিদের তানাখ ( Tanakh ) (যে গ্রন্থগুলো প্রকৃতপক্ষে একই) বোঝাতে গিয়ে এই পরিভাষাকেই নিরপেক্ষ মনে করে ব্যবহার করেন। হিব্রু বাইবেলকে ইহুদিরা তানাখ বলে থাকে। গ্রন্থটির তিনটি অংশের আদ্যক্ষরের সমন্বয়ে তানাখ শব্দটি গঠিত। ইসলাম ধর্মবিশ্বাসীগণ বিশ্বাস করেন মুসা (আঃ) এর উপর তাওরাত কিতাব নাজিল হয়। কিন্তু তারা তানাখকে তাওরাত কিতাব বলে স্বীকৃতি দেয় না।
হিন্দু শাস্ত্র
বেদ
মূল নিবন্ধ: বেদ
অথর্ববেদ সংহিতার একটি পৃষ্ঠা। এটি গ্রন্থের প্রাচীনতম অংশ।
বেদ (সংস্কৃত: वेद, " জ্ঞান") হল প্রাচীন ভারতে রচিত একাধিক ধর্মগ্রন্থের একটি সমষ্টি। বৈদিক সংস্কৃত ভাষায় রচিত বেদ
সংস্কৃত সাহিত্যের প্রাচীনতম নিদর্শন এবং প্রাচীনতম হিন্দু ধর্মগ্রন্থ।[১][২] বেদকে " অপৌরুষেয় " ("মানুষের দ্বারা রচিত নয়") মনে করা হয়। [৩][৪][৫] হিন্দুরা বিশ্বাস করেন, বেদ প্রত্যক্ষভাবে ঈশ্বর কর্তৃক প্রকাশিত হয়েছে। তাই বেদের অপর নাম "শ্রুতি" ("যা শোনা হয়েছে")।
[৬][৭] অন্য ধর্মগ্রন্থগুলিকে বলা হয় " স্মৃতি " ("যা মনে রাখা হয়েছে")। হিন্দু বিশ্বাস অনুসারে, বেদ ব্রহ্ম (সর্বোচ্চ উপাস্য ঈশ্বর) কর্তৃক প্রকাশিত। [৮] বৈদিক ধর্মগ্রন্থ বা শ্রুতি সংহিতা নামে পরিচিত চারটি প্রধান সংকলনকে কেন্দ্র করে লিপিবদ্ধ হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম তিনটি ঐতিহাসিক বৈদিক ধর্মের যজ্ঞ অনুষ্ঠান-সংক্রান্ত:
1. ঋগ্বেদ অংশে হোতার বা প্রধান পুরোহিত কর্তৃক পঠিত মন্ত্র সংকলিত হয়েছে;
2. যজুর্বেদ অংশে অধ্বর্যু বা অনুষ্ঠাতা পুরোহিত কর্তৃক পঠিত মন্ত্র সংকলিত হয়েছে;
3. সামবেদ অংশে উদ্গাতার বা মন্ত্রপাঠক পুরোহিত কর্তৃক গীত স্তোত্রগুলি সংকলিত হয়েছে;
4. অথর্ববেদ অংশে মারণ, উচাটন, বশীকরণ সংক্রান্ত মন্ত্রগুলি সংকলিত হয়েছে। [৯]
বেদের প্রতিটি পদ মন্ত্র নামে পরিচিত। কোনো কোনো বৈদিক মন্ত্র আধুনিক কালে প্রার্থনা সভা, ধর্মীয় অনুষ্ঠান বা অন্যান্য অনুষ্ঠানে পাঠ করা হয়ে থাকে।
ভারতীয় দর্শনের বিভিন্ন শাখা ও বিভিন্ন হিন্দু সম্প্রদায় বেদ সম্পর্কে ভিন্ন ভিন্ন মত পোষণ করে। ভারতীয় দর্শনের বিভিন্ন শাখা বেদকে তাদের প্রধান ধর্মমত ( আস্তিক ) হিসেবে গ্রহণ করেছে। অন্যান্য শাখা, বিশেষত বৌদ্ধধর্ম ও জৈনধর্ম বেদকে তাদের প্রধান ধর্মগ্রন্থ হিসেবে গ্রহণ করে না ( নাস্তিক)। [১০][১১] অধিকন্তু বৌদ্ধধর্ম, জৈনধর্ম,
শিখধর্ম , [১২][১৩] ও ব্রাহ্মধর্ম , [১৪] এবং দক্ষিণ ভারতের অনেক অব্রাহ্মণ হিন্দুরা[১৫] বেদের কর্তৃত্ব স্বীকার করে না। ইয়েঙ্গার ইত্যাদি কোনো কোনো দক্ষিণ ভারতীয় ব্রাহ্মণ তামিল দিব্য প্রবন্ধম্ বা আলোয়ারদের রচনাকে বেদের সমতুল্য জ্ঞান করেন। [১৬]
শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা বা গীতা
মূল নিবন্ধ: ভগবদ্গীতা
কুরুক্ষেত্রে কৃষ্ণ ও অর্জুন; অষ্টাদশ-ঊনবিংশ শতাব্দীর চিত্রকলা
ভগবদ্গীতা ( সংস্কৃত: भगवद्गीता,
ˈbʱəɡəʋəd̪ ɡiːˈt̪aː , ভগবানের গান) বা
শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা বা গীতা একটি ৭০০-শ্লোকের
হিন্দু ধর্মগ্রন্থ। এটি প্রাচীন সংস্কৃত মহাকাব্য
মহাভারত -এর একটি অংশ। যদিও গীতা একটি স্বতন্ত্র ধর্মগ্রন্থ তথা একটি পৃথক উপনিষদের মর্যাদা পেয়ে থাকে। হিন্দুরা গীতা -কে ভগবানের মুখনিঃসৃত বাণী মনে করেন। হিন্দুধর্ম, দর্শন ও সাহিত্যের ইতিহাসে গীতা এক বিশেষ স্থানের অধিকারী।[১৭] গীতা -র কথক কৃষ্ণ হিন্দুদের দৃষ্টিতে ঈশ্বরের অবতার পরমাত্মা স্বয়ং।[১৭] তাই গীতা -য় তাঁকে বলা হয়েছে "শ্রীভগবান"। [১৮]
কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে অর্জুনের রথচালকের ভূমিকায় কৃষ্ণ
গীতা -র বিষয়বস্তু কৃষ্ণ ও পাণ্ডব রাজকুমার অর্জুনের কথোপকথন। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ শুরু ঠিক আগে শত্রুপক্ষে আত্মীয়, বন্ধু ও গুরুকে দেখে অর্জুন কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েছিলেন। এই সময় কৃষ্ণ তাঁকে ক্ষত্রিয় যোদ্ধার ধর্ম স্মরণ করিয়ে দিয়ে এবং বিভিন্ন প্রকার যোগশাস্ত্র[১৯] ও বৈদান্তিক দর্শন ব্যাখ্যা করে তাঁকে যুদ্ধে যেতে উৎসাহিত করেন। তাই গীতা -কে বলা হয় হিন্দু ধর্মতত্ত্বের একটি সংক্ষিপ্ত পাঠ এবং হিন্দুদের জীবনচর্যার একটি ব্যবহারিক পথনির্দেশিকা। যোগশাস্ত্র ব্যাখ্যার সময় কৃষ্ণ নিজের " স্বয়ং ভগবান " রূপটি উন্মোচিত করেন এবং বিশ্বরূপে অর্জুনকে দর্শন দিয়ে আশীর্বাদ করেন। অর্জুন ছাড়া প্রত্যক্ষভাবে কৃষ্ণের মুখ থেকে গীতা শুনেছিলেন সঞ্জয় (তিনি যুদ্ধের ঘটনা ধৃতরাষ্ট্রের কাছে বর্ণনা করার জন্য বেদব্যাসের কাছ থেকে দিব্য দৃষ্টি লাভ করেছিলেন), হনুমান (তিনি অর্জুনের রথের চূড়ায় বসে ছিলেন) ও ঘটোৎকচের পুত্র বর্বরিক যিনি কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের সব ঘটনা দেখেছিলেন)।
গীতা -কে গীতোপনিষদ বলা হয়। অর্থাৎ, গীতা উপনিষদ বা বৈদান্তিক সাহিত্যের অন্তর্গত। [২০] "উপনিষদ্" নামধারী ধর্মগ্রন্থগুলি শ্রুতিশাস্ত্রের অন্তর্গত হলেও, মহাভারত -এর অংশ বলে গীতা স্মৃতিশাস্ত্রের অন্তর্গত। [২১][২২] আবার উপনিষদের শিক্ষার সারবস্তু গীতা -য় সংকলিত হয়েছে বলে একে বলা হয় "উপনিষদসমূহের উপনিষদ"। [২৩] গীতা -কে মোক্ষশাস্ত্র নামেও অভিহিত করা হয়।[২৪]
ভারতীয় মণীষীদের পাশাপাশি অ্যালডাস হাক্সলি, অ্যালবার্ট আইনস্টাইন , জে. রবার্ট ওপেনহাইমার , [২৫] রালফ ওয়াল্ডো এমারসন , কার্ল জাং , হেনরিক হিমার ও হারমান হেস প্রমুখ পাশ্চাত্য মণীষীরাও গীতা র উচ্চ প্রশংসা করেছেন। [২৩][২৬]
মহাভারত
মূল নিবন্ধ: মহাভারত
কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ; পুথিচিত্র
মহাভারত ( সংস্কৃত: महाभारत) সংস্কৃত ভাষায় রচিত
প্রাচীন ভারতের দুটি প্রধান মহাকাব্যের অন্যতম (অপরটি হল রামায়ণ)। এই মহাকাব্যটি হিন্দুশাস্ত্রের
ইতিহাস অংশের অন্তর্গত।
মহাভারত -এর মূল উপজীব্য বিষয় হল কৌরব ও পাণ্ডবদের গৃহবিবাদ এবং কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের পূর্বাপর ঘটনাবলি। তবে এই আখ্যানভাগের বাইরেও দর্শন ও ভক্তির অধিকাংশ উপাদানই এই মহাকাব্যে সংযোজিত হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ধর্ম , অর্থ, কাম ও মোক্ষ – এই চার পুরুষার্থ -সংক্রান্ত একটি আলোচনা (১২।১৬১) সংযোজিত হয়েছে এই গ্রন্থে। মহাভারত -এর অন্তর্গত অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ রচনা ও উপাখ্যানগুলি হল ভগবদ্গীতা, দময়ন্তীর উপাখ্যান, রামায়ণ-এর একটি সংক্ষিপ্ত পাঠান্তর ইত্যাদি। এগুলিকে মহাভারত -রচয়িতার নিজস্ব সৃষ্টি বলে মনে করা হয়।
কাশীদাসী মহাভারতের প্রথম পৃষ্ঠা
প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী, মহাভারত -এর রচয়িতা
ব্যাসদেব । অনেক গবেষক এই মহাকাব্যের ঐতিহাসিক বিকাশ ও রচনাকালীন স্তরগুলি নিয়ে গবেষণা করেছেন। অধুনা প্রাপ্ত পাঠটির প্রাচীনতম অংশটি মোটামুটি ৪০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ নাগাদ রচিত হয়।[২৭] মহাভারতের মূলপাঠটি তার বর্তমান রূপটি পরিগ্রহ করে গুপ্তযুগের প্রথমাংশে (খ্রিষ্টীয় চতুর্থ শতাব্দী)। [২৮] মহাভারত কথাটির অর্থ হল ভরত বংশের মহান উপাখ্যান । গ্রন্থেই উল্লিখিত হয়েছে যে ভারত নামে ২৪,০০০ শ্লোকবিশিষ্ট একটি ক্ষুদ্রতর আখ্যান থেকে মহাভারত মহাকাব্যের কাহিনিটি বিস্তার লাভ করে। [২৯]
মহাভারত -এ এক লক্ষ শ্লোক ও দীর্ঘ গদ্যাংশ রয়েছে। এই মহাকাব্যের শব্দসংখ্যা প্রায় আঠারো লক্ষ। মহাভারত মহাকাব্যটির আয়তন ইলিয়াড ও
ওডিসি কাব্যদ্বয়ের সম্মিলিত আয়তনের দশগুণ এবং
রামায়ণ-এর চারগুণ।[৩০][৩১]
পুরাণ
মূল নিবন্ধ: পুরাণ
অষ্টমাতৃকা-সহ দেবী অম্বিকা ( দুর্গা ) রক্তবীজ দৈত্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত;
দেবীমাহাত্ম্যম্ , মার্কণ্ডেয় পুরাণের পুথিচিত্র
পুরাণ ( সংস্কৃত: पुराण purāṇa , "প্রাচীনযুগীয়") হিন্দু ,
বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মাবলম্বীদের গুরুত্বপূর্ণ আখ্যানমূলক ধর্মগ্রন্থ-সমুচ্চয়। পুরাণে সৃষ্টি থেকে প্রলয় পর্যন্ত ব্রহ্মাণ্ডের ইতিহাস, রাজন্যবর্গ, যোদ্ধৃবর্গ, ঋষি ও উপদেবতাগণের বংশবৃত্তান্ত এবং হিন্দু সৃষ্টিতত্ত্ব, দর্শন ও ভূগোলতত্ত্ব আলোচিত হয়েছে। [৩২] পুরাণে সাধারণত নির্দিষ্ট কোনো দেবতাকে প্রাধান্য দেওয়া হয় এবং তাতে ধর্মীয় ও দার্শনিক চিন্তার প্রাবল্যও লক্ষিত হয়। এই গ্রন্থগুলি প্রধানত আখ্যায়িকার আকারে রচিত, যা একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে পরস্পর সম্পর্কযুক্ত।
লোকমতে, মহাভারত -রচয়িতা ব্যাসদেব পুরাণসমূহের সংকলক।[৩৩] যদিও পুরাণের সর্বাপেক্ষা প্রাচীন পাঠগুলি গুপ্ত সাম্রাজ্যের (খ্রিস্টীয় তৃতীয়-পঞ্চম শতাব্দী) সমসাময়িক। এর অধিকাংশ উপাদানই ঐতিহাসিক বা অন্যান্য সূত্রাণুযায়ী এই সময়কাল ও তার পরবর্তী শতাব্দীগুলির সঙ্গে সম্পর্কিত। পুরাণগ্রন্থগুলি ভারতের নানা স্থানে রচিত হয়েছিল। পুরাণের সামগ্রিক পাঠে কিছু সাধারণ ধারণা লক্ষিত হয়; কিন্তু একটি পুরাণের উপর অপর আরেকটি পুরাণের প্রভাব অন্বেষণ দুঃসাধ্য। তাই সাধারণভাবে এগুলিকে সমসাময়িক বলেই ধরে নেওয়া হয়।. [৩৪]
লিখিত পাঠ্যগুলির রচনাতারিখ পুরাণের প্রকৃত রচনাতারিখ নয়। কারণ একথা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে পূর্ববর্তী এক সহস্রাব্দ কাল ধরে এই কাহিনিগুলি মৌখিকভাবে প্রচারিত হয়ে আসে। এবং পরবর্তীকালে মধ্যযুগ থেকে আধুনিক যুগ পর্যন্ত এগুলির আকার ও রূপ পরিবর্তিত হতে দেখা যায়। [৩৫]
কাশীর মহারাজা ডক্টর বিভূতি নারায়ণ সিংহের পৃষ্ঠপোষকতা ও তত্ত্বাবধানে অল ইন্ডিয়া কাশীরাজ ট্রাস্ট গঠিত হলে পুরাণ নিয়ে সুসংহত গবেষণার কাজ শুরু হয়। এই সংস্থা থেকে পুরাণের সমালোচনামূলক সংস্করণ এবং পুরাণম্ নামে একটি পত্রিকা প্রকাশিত হতে থাকে।[৩৬]
উপনিষদ
উনিশ শতকের প্রথমভাগে লেখা ঋগ্বেদ পুথি
উপনিষদ্ ( সংস্কৃত: उपनिषद्) হিন্দুধর্মের এক বিশেষ ধরনের ধর্মগ্রন্থের সমষ্টি। এই বইগুলিতে হিন্দুধর্মের তাত্ত্বিক ভিত্তিটি আলোচিত হয়েছে। উপনিষদের অপর নাম বেদান্ত । ধর্মপ্রাণ হিন্দুরা বিশ্বাস করেন, উপনিষদ্গুলিতে সর্বোচ্চ সত্য ব্রহ্মের প্রকৃতি এবং মানুষের মোক্ষ বা আধ্যাত্মিক মুক্তি লাভের উপায় বর্ণিত হয়েছে। উপনিষদ্গুলি মূলত বেদ-এর
ব্রাহ্মণ ও আরণ্যক [৩৭] অংশের শেষ অংশে পাওয়া যায়। এগুলি প্রাচীনকালে গুরু-শিষ্য পরম্পরায় মুখে মুখে প্রচলিত ছিল।
দুশোরও বেশি উপনিষদের কথা জানা যায়। এগুলির মধ্যে প্রথম বারোটিই প্রাচীনতম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এগুলিকে "মুখ্য উপনিষদ" বলে। ভগবদ্গীতা,
ব্রহ্মসূত্র এবং মুখ্য উপনিষদ্গুলি [৩৮] (এগুলিকে একসঙ্গে প্রস্থানত্রয়ী বলা হয়) পরবর্তীকালে হিন্দু বেদান্ত দর্শনের বিভিন্ন শাখার জন্ম দিয়েছিল। এগুলির মধ্যে দুটি একেশ্বরবাদী শাখা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। [note ১][note ২][note ৩]
ঐতিহাসিকদের মতে, মুখ্য উপনিষদ্গুলি প্রাক্-বৌদ্ধ যুগ থেকে [৪২][৪৩] শুরু করে খ্রিস্টীয় প্রথম সহস্রাব্দের প্রথমার্ধ্ব পর্যন্ত [৪৩] সুদীর্ঘ সময়কালের বিভিন্ন পর্বে রচিত হয়। অপর দিকে অপ্রধান উপনিষদগুলি মধ্যযুগ ও প্রাক্-আধুনিক যুগের রচনা।
[৪৪] অবশ্য প্রতিটি উপনিষদের সঠিক রচনাকাল নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক রয়েছে। ব্রিটিশ কবি মার্টিন সেমোর-স্মিথ উপনিষদ্গুলিকে "সর্বকালের ১০০টি সবচেয়ে প্রভাবশালী বই"-এর তালিকাভুক্ত করেছেন। [৪৫] আর্থার শোপেনহাওয়ার, রালফ ওয়াল্ডো এমারসন ও হেনরি ডেভিড থোরো সহ বহু বিশিষ্ট ব্যক্তি উপনিষদ্গুলির গুরুত্ব স্বীকার করেছেন। গবেষকেরা উপনিষদের দর্শনের সঙ্গে
প্লেটো ও কান্টের দর্শনের মিল খুঁজে পান। [৪৬][৪৭]
রামায়ণ
মূল নিবন্ধ: রামায়ণ
প্রাচীন হস্তলিখিত রামায়ণ,
রাজস্থান , ভারত
রামায়ণ ( দেবনাগরী : रामायण) একটি প্রাচীন
সংস্কৃত মহাকাব্য । হিন্দু বিশ্বাস অনুযায়ী, ঋষি
বাল্মীকি রামায়ণের রচয়িতা। এই গ্রন্থটি
হিন্দুশাস্ত্রের স্মৃতি বর্গের অন্তর্গত। রামায়ণ ও
মহাভারত ভারতের দুটি প্রধান মহাকাব্য। [৪৮] এই কাব্যে বিভিন্ন সম্পর্কের পারস্পরিক কর্তব্য বর্ণনার পাশাপাশি আদর্শ ভৃত্য, আদর্শ ভ্রাতা, আদর্শ স্ত্রী ও আদর্শ রাজার চরিত্র চিত্রণের মাধ্যমে মানবসমাজের আদর্শ ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
রামায়ণ নামটি রাম ও অয়ন শব্দদুটি নিয়ে গঠিত একটি তৎপুরুষ সমাসবদ্ধ পদ; যার আক্ষরিক অর্থ
রামের যাত্রা। রামায়ণ ৭টি কাণ্ড (পর্ব) ও ৫০০টি
সর্গে বিভক্ত ২৪,০০০ শ্লোকের সমষ্টি। [৪৯] এই কাব্যের মূল উপজীব্য হল বিষ্ণুর অবতার রামের জীবনকাহিনি। বিষয়গতভাবে, রামায়ণ-উপাখ্যানে বর্ণিত হয়েছে মানব অস্তিত্বের নানান দিক এবং প্রাচীন ভারতের ধর্মচেতনা ।[২৭]
রামায়ণের শ্লোকগুলি ৩২-অক্ষরযুক্ত অনুষ্টুপ ছন্দে রচিত। পরবর্তীকালের সংস্কৃত কাব্য এবং ভারতীয় জীবন ও সংস্কৃতিতে এই কাব্যের প্রভাব অপরিসীম।
মহাভারত মহাকাব্যের মতোই রামায়ণও একটি কাহিনিমাত্র নয়: হিন্দু ঋষিদের শিক্ষা দার্শনিক ও ভক্তি উপাদান সহ আখ্যানমূলক উপমার মাধ্যমে উপস্থাপিত হয়েছে এই মহাকাব্যে। ভারতের সংস্কৃতি চেতনার মৌলিক উপাদানগুলিই প্রতিফলিত হয়েছে রাম, সীতা, লক্ষ্মণ, ভরত , হনুমান ও রাবণ চরিত্রগুলির মধ্যে।
হিন্দুধর্মের বাইরে ও বহির্ভারতেও রামায়ণের কয়েকটি পাঠান্তর প্রচলিত রয়েছে। এগুলির মধ্যে উল্লেখনীয় বৌদ্ধ রামায়ণ দশরথ জাতক (জাতক সংখ্যা ৬৪১) ও জৈন রামায়ণ এবং রামায়ণের থাই,
লাও , ব্রহ্মদেশীয় ও মালয় সংস্করণ।
বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থ
ত্রিপিটক
মূল নিবন্ধ: ত্রিপিটক
ত্রিপিটক
ত্রিপিটক বৌদ্ধ ধর্মীয় পালি গ্রন্থের নাম। বুদ্বের দর্শন এবং উপদেশের সংকলন। পালি তি-পিটক হতে বাংলায় ত্রিপিটক শব্দের প্রচলন। তিন পিটকের সমন্বিত সমাহারকে ত্রিপিটক বোঝানো হচ্ছে। এই তিনটি পিটক হলো বিনয় পিটক, সূত্র পিটক ও
অভিধর্ম পিটক ।
পিটক শব্দটি পালি এর অর্থ - ঝুড়ি, পাত্র, বাক্স ইত্যাদি, অর্থ যেখানে কোনো কিছু সংরক্ষন করা হয়।[৫০] বৌদ্ধদের মূল ধর্মীয় গ্রন্থ। খ্রীষ্ট পূর্ব ৩য় শতকে সম্রাট অশোকের রাজত্বকালে ত্রিপিটক পূর্ণাঙ্গ গ্রন্থ হিসাবে স্বিকৃত হয়। এই গ্রন্থের গ্রন্থনের কাজ শুরু হয়েছিল গৌতম বুদ্ধ এর পরিনির্বানের তিন মাস পর অর্থাৎ খ্রিষ্ট পূর্ব ৫৪৩ অব্ধে এবং সমাপ্তি ঘটে খ্রিষ্ট পূর্ব প্রায় ২৩৬ অব্ধে। প্রায় তিনশ বছরে তিনটি সঙ্ঘায়নের মধ্যে এর গ্রন্থায়নের কাজ শেষ হয়।[৫১]
বিনয় পিটক
বিনয় ত্রিপিটকের সর্বাগ্রে গ্রথিত বিষয়, বিনয়
বুদ্ধশাসনের আয়ু স্বরুপ, বিনয়ের স্থিতিতেই বুদ্ধ শাসনের স্থিতি নির্ভরশীল। গৌতম বুদ্ধের পরিনির্বাণের অব্যবহতি পরে এ বিষয় অনুধাবন করে বুদ্ধশিষ্যদের অগ্রজ সারির প্রাজ্ঞ- অভিজ্ঞ ধর্মধর, বিনয়ধর ও মাতিকাধর ভিক্ষুদের নিয়ে প্রথম সংগীতির মাধ্যমে বিনয় ও ধর্ম সংরক্ষ্ণণের ব্যবস্থা করা হয়। [৫২]
সূত্র পিটক
সূত্র শব্দের অর্থ সত্যের প্রকাশ । সেই সত্য হলো তথাগত গৌতম বুদ্ধ সম্বোধির প্রভাবে জ্ঞাত সত্যের প্রকাশ। অন্যভাবে বলা যায় চতুরার্য সত্যের সূচনা করে বলেই সূত্র। [৫৩] যে কথা স্বয়ং বুদ্ধ বলেছেন " চারি আর্য্য সত্য বর্জিত কোন ধর্ম নেই।" সুতরাং - দুঃখ , দুঃখের কারণ (সমুদয়) , দুঃখ নিরোধ ও দুঃখ নিরোধের উপায় - এই চারি সত্যের ব্যখামুলক প্রকাশ বুদ্ধ বচনের যেই অংশে নিহিত তাই সূত্র। সূত্র জাতীয় বুদ্ধ বচন সমুহ ত্রিপিটকের যে বিভাগে একত্রীকরণ করা হয়েছে তাকে সুত্ত পিটক বলে।Prof. Winternitz লিখেছেন " the suttapitak is our mose reliable source for the Dhamma , the religion of Buddha and his earliest disciples" [৫৪]
অভিধর্ম পিটক
ত্রিপিটকের তিন মূল ধারার অন্যতম একটি হলো অভিধর্ম পিটক। এটিকে বৌদ্ধ দর্শনের সংহত সংস্করণ বলা হয়। এখানে বৌদ্ধ দর্শনের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ রয়েছে। তথাগত বুদ্ধ নানা উপদেশের মাধ্যমে যে তত্ত্বসমূহ উপস্থাপন করেছেন, যে নৈতিক আদর্শিক বিষয়সমুহ তিনি অনুসরণ, অনুকরণ ও অনুধাবন করতে উপদেশ দিয়েছেন সে তত্ত্বসমুহের বিন্যস্ত বিশ্লেষণ করা হয়েছে বিনয় পিটকে।[৫৫] বাঙ্গালী অভিধর্ম গবেষকদের মধ্যে অন্যতম বীরেন্দ্র লাল মুৎসদ্দি অভিধর্ম পিটক সম্বন্ধে বলেছেন:
খ্রিস্ট ধর্মশাস্ত্র
বাইবেল
মূল নিবন্ধ: বাইবেল
গুটেনবার্গ বাইবেল
বাইবেল হল খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মগ্রন্থ। বাইবেল (বিবলজ) শব্দটি উদ্ভুত হয়েছে বা 'পাওযা' গ্রীক বিবলিয়া শব্দ থেকে, যার অর্থ 'একটি পুস্তক'। এটি প্যাপিরাস গাছের ছাল। বাইবেল হচ্ছে
শাস্ত্র লিপি বা পুস্তক , ঈশ্বরের বাক্য । বাইবেল হলো ৬৬টি পুস্তকের একটি সংকলন, যা দুটি প্রধান ভাগে বিভক্ত— ৩৯টি পুস্তক সম্বলিত পুরাতন নিয়ম বা ওল্ড টেস্টামেন্ট, এবং ২৭টি পুস্তক সম্বলিত নতুন নিয়ম বা নিউ টেস্টামেন্ট। খ্রিস্টধর্মমতে, ১৬০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ৪০জন লেখক বাইবেল রচনা করেছিলেন। এরা ছিলেন পৃথিবীর বিভিন্ন অংশের বিভিন্ন লোক। বাইবেলের মুখ্য বিষয়বস্তু বা কেন্দ্রমণি হলেন যীশু। পুরাতন নিয়ম মূলত হিব্রু ভাষায় লিখিত, তবে দানিয়েল ও ইষ্রা পুস্তক দুটির কিছু অংশ অরামীয় ভাষায় লিখিত। নুতন নিয়ম গ্রীক ভাষায় রচিত। বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ এই বাইবেল লিখেছেন। খ্রিস্টানগণ বিশ্বাস করেন, এই বাইবেল রচনা হয়েছিল খ্রিস্টীয় ত্রিত্ববাদের অন্যতম পবিত্র আত্মার সহায়তায়। পৃথিবীর অনেক ভাষায় বাইবেল অনুবাদ হয়েছে। ইসলাম ধর্মে "বাইবেল" বলে কোনো ধর্মগ্রন্থের উল্লেখ পাওয়া যায় না। উল্লেখ পাওয়া যায়, ঈশ্বরের বাণীবাহক ঈসার [আ.] প্রতি অবতীর্ণ হয়েছিলইঞ্জিল নামক পূর্ণাঙ্গ ধর্মগ্রন্থ। ইঞ্জিলে বলা হয়েছে যে মানুষের গুনাহ্ থেকে নাজাত করার জন্য আল্লাহ্ তাঁর মনোনিত ব্যক্তি ঈসাকে দুনিয়াতে প্রেরন করেন। যে কেউ ঈসার উপর ঈমান আনে এবং গুনাহের মাফ পাবার জন্য তওবা করে আল্লাহ্র দিকে ফেরে সেই নাজাত পায়। ইঞ্জিল কিতাবের ইউহোন্না খন্ডের ১৪ রুকু ৬ আয়াতে বলা হয়েছে, "আমিই (ঈসাই) পথ, সত্য আর জীবন। আমার মধ্য দিয়ে না গেলে কেউই পিতার কাছে (অর্থাৎ আল্লাহ্র কাছে) যেতে পারে না।" উল্লেখ্য যে ঈসা (আঃ) আল্লাহ্ কে পিতা বলে সম্মধন করেছেন। জীবন-ধারার ব্যাখ্যামতে, এই ঈসাই হলেন খ্রিস্টধর্মমতে যীশু। তাই ধরে নেয়া হয় "বাইবেল" হলো সেই ইঞ্জিল। কিন্তু ইসলাম, পূর্বতন এসব ধর্মগ্রন্থকে স্বীকৃতি দিলেও সেই যাবতীয় নিয়মকানুনকে রহিত করে শেষ বাণীবাহকের আনা ধর্মগ্রন্থ ক্বোরআন-কে একমাত্র স্বীকৃত ধর্মগ্রন্থ ও জীবনবিধান হিসেবে স্বীকার করে।
ইসলাম ধর্মের ধর্মগ্রন্থ
আল কুরআন
মূল নিবন্ধ: কুরআন
কুরআন শরীফ ( ﺍﻟﻘﺮﺁﻥ )
মুসলমানদের নিকট পবিত্র ধর্মগ্রন্থ। [৫৭] “কুরান” বা “কুরআন” শব্দটি আরবী শব্দ, এই শব্দের উতপত্তি ও অর্থ নিয়ে বিশেষজ্ঞ আলেমদের মাঝে মতপার্থক্য আছে। কারো কারো মতে কুরান শব্দটি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি অবতীর্ন কিতাবের “আলাম” বা নির্ধারিত নাম, যেমন তাওরাত, ইঞ্জিল, যাবুর দ্বারা নির্ধারিত তিনটি পৃথক পৃথক কিতাব বুঝানো হয়ে থাকে, কুরান দ্বারাও ঠিক তেমনি একটি নির্ধারিত কিতাব বুঝানো হয়ে থাকে। এই হিসাবে শব্দটি –আরবী ব্যকরন রীতি অনুযায়ী- অন্য কোন উতস-শব্দ থেকে “মুশতাক” বা উদ্ভুত শব্দ নয়। ইমাম শাফী রাঃ এর মত এটা। আবার অন্য আলেমের মত এই যে, কুরান শব্দটি তার উতস-শব্দ থেকে “মুশতাক” বা উদ্ভুত একটি শব্দ। যারা এই মত প্রকাশ করেন তারা আবার কুরানের উতস-মুল বা মুল শব্দ নির্ধারনে ভিন্ন ভিন্ন মত প্রদান করেছেনঃ কারো মতে কুরান শব্দটি আরবী “কারান” থেকে উদ্ভুত যার অর্থ যুক্ত করা, যেহেতু কুরানে বিভিন্ন আয়াত, সুরা একে অপরের সাথে যুক্ত তাই একে “কুরান” বলা হয়ে থাকে। আবার কারো মতে মুল শব্দ “কারান” নয়, বরং মুল শব্দ হচ্ছে “করায়া” যার অর্থ পড়া, এখানে আরবী ভাষার রীতি অনুযায়ি পড়া দ্বারা পঠিত গ্রন্থ বা কিতাবকে বুঝানো হয়েছে । কুরানের এই শেষোক্ত অর্থই বেশী পরিচিত -অর্থাৎ কুরানের শাব্দিক অর্থ “পঠিত কিতাব”। [৫৮] “কুরান আল্লাহর কালাম, যা তার রাসুলের উপর অবতীর্ন হয়েছে, যার অনুরুপ কুরান পেশ করতে সবাই অক্ষম, যার তেলাওয়াত ইবাতাদ, যা “মুতাওয়াতির” বা অকাট্যভাবে বর্নিত, যা মুসহাফে লিখিত, যার শুরু হয়েছে সুরা ফাতিহা দিয়ে আর শেষ হয়েছে সুরা নাসের মাধ্যমে”।
ইসলামী ইতিহাস অনুসারে দীর্ঘ তেইশ বছর ধরে খণ্ড খণ্ড অংশে এটি ইসলামের নবী মুহাম্মাদের নিকট অবতীর্ণ হয়। কুরআনে সর্বমোট ১১৪টি সূরা আছে।
আয়াত বা পঙক্তি সংখ্যা ৬,২৩৬ টি বা ৬,৬৬৬ টি। এটি মূল আরবি ভাষায় অবর্তীর্ণ হয়।[৫৯][৬০][৬১][৬২] মুসলিম চিন্তাধারা অনুসারে কুরআন ধারাবাহিকভাবে অবর্তীর্ণ ধর্মীয় গ্রন্থগুলোর মধ্যে সর্বশেষ এবং গ্রন্থ অবতরণের এই ধারা ইসলামের প্রথম বাণীবাহক আদম থেকে শুরু হয়। কুরআনে অনেক ঐতিহাসিক ঘটনার উল্লেখ রয়েছে যার সাথে বাইবেলসহ অন্যান্য ধর্মীয়গ্রন্থের বেশ মিল রয়েছে, অবশ্য অমিলও কম নয়। তবে কুরআনে কোনও ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা নেই। ইসলামী ভাষ্যমতে কুরআন অপরিবর্তনীয় এবং এ সম্পর্কে মুসলিমরা কুরয়ানের যে আয়াতের কথা উল্লেখ করে থাকে তা হল:
আরবি ব্যাকরণে কুরআন শব্দটি মাসদার তথা
ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এটি ﻗﺮﺃ
ক্বরা'আ ক্রিয়া পদ থেকে এসেছে যার অর্থ পাঠ করা বা আবৃত্তি করা । এই ক্রিয়াপদটিকেই কুরআন নামের মূল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।[৬৪] এই শব্দটির
মিটার বা "মাসদার" ( ﺍﻟﻮﺯﻥ ) হচ্ছে ﻏﻔﺮﺍﻥ তথা "গুফরান"। এর অর্থ হচ্ছে অতিরিক্ত ভাব, অধ্যবসায় বা কর্ম সম্পাদনার মধ্যে একাগ্রতা। উদাহরণস্বরুপ, ﻏﻔﺮ নামক ক্রিয়ার অর্থ হচ্ছে "ক্ষমা করা"; কিন্তু এর আরেকটি মাসদার রয়েছে যার যা হলো ﻏﻔﺮﺍﻥ , এই মাসদারটি মূল অর্থের সাথে একত্রিত করলে দাঁড়ায় ক্ষমা করার কর্মে বিশেষ একাগ্রতা বা অতি তৎপর বা অতিরিক্ত ভাব। সেদিক থেকে কুরআন অর্থ কেবল পাঠ করা বা আবৃত্তি করা নয় বরং আরেকটি অর্থ হচ্ছে একাগ্র ভঙ্গীতে পাঠ বা আবৃত্তি করা। কুরআনের মধ্যেও এই অর্থেই কুরআন শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। কুরআনের সূরা আল-কিয়ামাহ্ (৭৫ নং সূরা) ১৮ নং আয়াতে এই শব্দটি উল্লেখিত আছে:
হাদিস
মূল নিবন্ধ: হাদিস
হাদিস (আরবিতে ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ ) হলো মূলত ইসলাম ধর্মের শেষ বাণীবাহক হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাণী ও জীবনাচরণ। হাদিসের উপদেশ মুসলমানদের জীবনাচরণ ও ব্যবহারবিধির অন্যতম পথনির্দেশ। কুরআন ইসলামের মৌলিক গ্রন্থ এবং হাদিসকে অনেক সময় তার ব্যাখ্যা হিসেবেও অভিহিত করা হয়। আল্লামা হাফেজ সাখাবী (রহ.) বলেন-
ﻭﺍﻟﺤﺪﻳﺚ ﻟﻐﺔ ﺿﺪ ﺍﻟﻘﺪ ﻳﻢ ﻭﺍﺻﻄﻼ ﺣﺎﻣﺎﺍﺿﻴﻒ ﺍﻟﻰ ﺍﻟﻨﺒﻰ ﷺ ﻗﻮﻻ ﻟﻪ ﺍﻭﻓﻌﻼ ﻟﻪ ﺍﻭﺗﻘﺮﻳﺮ ﺍﻭﺻﻔﺔ ﺣﺘﻰ ﺍﻟﺤﺮﻛﺎﺕ ﻭﺍﻟﺴﻜﻨﺎﺕ ﻓﻰ ﺍﻟﻴﻘﻈﺔ ﻭﺍﻟﻤﻨﺎﻡ -
অর্থ : আভিধানিক অর্থে হাদীস শব্দটি কাদীম তথা অবিনশ্বরের বিপরীত আর পরিভাষায় বলা হয় রাসূলুাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দিকে সম্বন্ধযুক্ত। চাই তার বক্তব্য হোক বা কর্ম বা অনুমোদন অথবা গুণ এমন কি ঘুমন্ত অবস্থায় বা জাগ্রত অবস্থায় তাঁর গতি ও স্থির সবই হাদীস।
বুখারী শরীফের বিশিষ্ট ব্যাখ্যাগ্রন্থ ﻋﻤﺪﺓ ﺍﻟﻘﺎﺭﻯ এর মধ্যে হাদীস সম্বন্ধে রয়েছে:
ﻋﻠﻢ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ ﻫﻮ ﻋﻠﻢ ﻳﻌﺮﻑ ﺑﻪ ﺍﻗﻮﺍﻝ ﺍﻟﻨﺒﻰ ﷺ ﻭﺍﻓﻌﺎﻟﻪ ﻭﺍﺧﻮﺍﻟﻪ –
অর্থ : ইলমে হাদীস এমন বিশেষ জ্ঞান যার সাহায্যে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কথা, কাজ ও অবস্থা জানতে পারা যায়। আর ফিক্হবিদদের নিকট হাদীস হল:
ﺍﻗﻮﺍﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﷺ ﻭﺍﻓﻌﺎﻟﻪ –
অর্থ : হাদীস হলো আল্লাহর রাসূলের কথা ও কাজসমূহ।
বিখ্যাত মুহাদ্দিস ও আলিয়া মাদ্রাসার সাবেক হেড মাওলানা মুফতী সাইয়্যেদ মুহাম্মাদ আমীমুল ইহসান বারকাতী (রহ.) এর মতে, হাদীস ( ﺣﺪﻳﺚ ) এমন একটি বিষয় যা রাসূলুাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী, কর্ম ও নীরবতা এবং সাহাবায়ে কেরাম, তাবিঈনদের কথা, কর্ম ও মৌন সম্মতিকে বুঝায়।[৬৬]
তথ্য সূত্র
1. ↑ see e.g. Radhakrishnan ও Moore 1957, পৃ. 3; Witzel, Michael, "Vedas and Upaniṣads", in: Flood 2003, পৃ. 68;
MacDonell 2004 , পৃ. 29–39; Sanskrit literature (2003) in Philip's Encyclopedia. Accessed 2007-08-09
2. ↑ Sanujit Ghose (2011). " Religious Developments in Ancient India " in Ancient History Encyclopedia .
3. ↑ Sound and Creation । Kanchi Kamakoti Peetham। সংগৃহীত ফেব্রুয়ারি ১০, ২০১২
4. ↑ Late., Pujyasri Chandrasekharendra Saraswati, Sankaracharya of Kanchi Kamakoti Peetham। The Vedas । Chennai, India: Bharatiya Vidya Bhavan, Mumbai। পৃ: 3 to 7। আইএসবিএন 81-7276-401-4
5. ↑ Apte, pp. 109f. has "not of the authorship of man, of divine origin"
6. ↑ Apte 1965 , পৃ. 887
7. ↑ Müller 1891 , পৃ. 17–18
8. ↑ Seer of the Fifth Veda: Kr̥ṣṇa Dvaipāyana Vyāsa in the Mahābhārata By Bruce M. Sullivan
9. ↑ Bloomfield, M. The Atharvaveda and the Gopatha-Brahmana, (Grundriss der Indo-Arischen Philologie und Altertumskunde II.1.b.) Strassburg 1899; Gonda, J. A history of Indian literature: I.1 Vedic literature (Samhitas and Brahmanas); I.2 The Ritual Sutras. Wiesbaden 1975, 1977
10. ↑ Flood 1996, পৃ. 82
11. ↑ "The brahmin by caste alone, the teacher of the
Veda, is (jokingly) etymologized as the 'non-meditator' ( ajjhāyaka). Brahmins who have memorized the three Vedas ( tevijja ) really know nothing: it is the process of achieving Enlightenment — what the Buddha is said to have achieved in the three watches of that night — which constitutes the true 'three knowledges.'" R.F. Gombrich in Paul Williams, ed., "Buddhism: Critical Concepts in Religious Studies." Taylor and Francis 2006, page 120.
12. ↑ Chahal, Dr. Devindar Singh (Jan–জুন ২০০৬)। "Is Sikhism a Unique Religion or a Vedantic Religion? "।
Understanding Sikhism - the Research Journal 8 (1): 3–5�.
13. ↑ Aad Guru Granth Sahib। Shiromani Gurdwara Parbandhak Committee, Amritsar। ১৯৮৩।
14. ↑ "Eclecticism and Modern Hindu Discourse, Brian Hatcher, OUP 1999"
15. ↑ The Dravidian Movement by Gail Omvedt
16. ↑ The Vernacular Veda by Vasudha Narayanan
17. ↑ ১৭.০ ১৭.১ Nikhilananda, Swami। "Introduction"। The Bhagavad Gita । পৃ: ১।
18. ↑ "Bhagavan" । Bhaktivedanta VedaBase Network (ISKCON)। সংগৃহীত ২০০৮-০১-১৪।
19. ↑ Introduction to the Bhagavad Gita
20. ↑ Bhaktivedanta Swami Prabhupada, A.C. (১৯৮৩)।
Bhagavad-gītā As It Is । Los Angeles: The Bhaktivedanta Book Trust।.
21. ↑ Coburn, Thomas B. (১৯৮৪)। "'Scripture' in India: Towards a Typology of the Word in Hindu Life"। Journal of the American Academy of Religion 52 (3): 435–459।
জেএসটিওআর 1464202 ।
22. ↑ Tapasyananda, p. 1.
23. ↑ ২৩.০ ২৩.১ Pandit, Bansi। Explore Hinduism । পৃ: ২৭।
24. ↑ Nikhilananda, Swami (১৯৪৪)। "Introduction"। The Bhagavad Gita । Advaita Ashrama। পৃ: xxiv।
25. ↑ [১] "The Gita of J. Robert Oppenheimer" by JAMES A. HIJIYA, Professor of History, University of Massachusetts Dartmouth (PDF file)
26. ↑ Hume, Robert Ernest (১৯৫৯)। The world's living religions। পৃ: ২৯।
27. ↑ ২৭.০ ২৭.১ Brockington (1998, p. 26) উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ অবৈধ; আলাদা বিষয়বস্তুর সঙ্গে "Brockington" নাম একাধিক বার সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে
28. ↑ Van Buitenen; The Mahabharata - 1; The Book of the Beginning. Introduction (Authorship and Date)
29. ↑ bhārata means the progeny of Bharata , the legendary king who is claimed to have founded the
Bhāratavarsha kingdom.
30. ↑ Spodek, Howard . Richard Mason. The World's History. Pearson Education: 2006, New Jersey. 224, 0-13-177318-6
31. ↑ Amartya Sen, The Argumentative Indian. Wr