সোমবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

ইসকোনদের কৃষ্ণের ভেতরে আসল কৃষ্ণ...!

ইসকোন ঠাকুরদের একটি সংগঠনের নাম আন্তর্জাতিক কৃষ্ণ ভাবনামৃত সংঘ, সংক্ষেপে ইসকোন, যে নামে এই সংগঠনটি সহজ সরল ধর্ম প্রাণ হিন্দুদের কৃষ্ণের নামে হিন্দুদের ধন সম্পদ, জায়গা, জমি কেঁড়ে নিচ্ছে, মালা, ঝোলা, তিলক বিক্রি করছে , নিজেরা সাধু হয়ে ভিক্ষার ঝুলি ঘাড়ে নিয়ে সাধারণ গৃৃহস্ত হিন্দুদেরও ভিক্ষার ঝুলি তুলে দিচ্ছে, তাতে দাতা এবং ভিক্ষুকের ঝুলি পার্থক্য নিরূপণ করা কঠিন, কিংবা কৃষ্ণের নামে ভিক্ষা করলেও তাদেরকে আপনারা ভিক্ষুক বলতে পারবেন না! এটাও তাদের একটা চালাকি, বেশী জোর বলতেন একজন কৃষ্ণ ভক্ত, কারণ ভিক্ষুক হলে তাদের ঘারেই শুধু ঝোলাটা থাকতো, যা আপনারও ঘারে! ইসকোন নামক এই সংগঠনটি ভুলিয়ে ভালে জমি কেঁড়ে নেয়, যখন কেঁড়ে নেয় তখন বলে কৃষ্ণকে দান করছো, আবার যখন নেওয়া হয়ে গেলো তখন বলে, আপনি কৃষ্ণ ভাবনা মৃত সংঘকে দান করেছেন, যেন ভগবান কৃষ্ণের জমি, জায়গার খুব অভাব, কৃষ্ণের নামে সহজ সরল হিন্দুদের ঠকিয়ে খাওয়াই এই সংঘের কাজ, ইসকোন যদি international ই হয় তাহলে আমরা যখন এদেরকে জমি জায়গা দান করি, তখন সম্পদটা দেশীয় না আন্তর্জাতিক হয়? বাংলাদেশ এবং ভারতের বহু জায়গা, শিল্প কারখানার মালিক এখন ইসকোন! যে ভারতের টাকায় ইসকোন এত প্রতিষ্ঠিত তাদের সাধুরা কি বলে জানেন, আমাদের পিছনে আমেরিকা আছে, অথচ তাদের মুখে কখনো শুনিনি আমাদের পিছনে হিন্দু রাস্ট্র ভারত আছে, বিশ্বে কি ভারত কম শক্তিশালী ?ভারতের কথা তাদেরকে আবার বলতে দেখি না কেন? আব তারা যে দেশ নিয়ে গর্ব করে যারা আবার খ্রীষ্টান? দেশাত্ববোধ টাও এদের মধ্যে খুব একটা লক্ষ্য করা যায় না! এরাও একটা আত্মধ্বংসী সংগঠন, দিন রাত যতবার কৃষ্ণ কৃষ্ণ করে তার চেয়ে এদের মুখে কথায় কথায় আমেরিকা আমেরিকা বেশী, কার ভালবাসায় এরা সিক্ত, হিন্দুরা কি একবার ভেবে দেখেছেন, Electric মেসিন দিয়ে কি কখনো নাম জপ হয়? মেসিন যেখানে কাজ করে সেখানে মনের সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায়, কৃষ্ণ নাম জপতে মন না মেসিনের প্রধান্য বেশী, নাকি নাম জপার মেসিন বেঁচাই এদের লক্ষ্য কোনটি? , ? এদের কর্ম কান্ড হিন্দু জাতির জন্য মৃতরই মতো ! সে সত্যটাই হয়তো আজ হোক কাল হোক, মানুষ জেনে ফেলবে, , হয়তো অদূর ভগিষ্যতে যখন তাদের নীতি মানুষের কাছে মৃত বলে প্রমাণীত হবে তখন তাদের অবশিষ্ট সাধুদের বলতে আর অসুবিধা হবে না, আমরাতো ভাবনামৃত সংগঠনেই, তাই আমাদের ভাবনা মৃত হয়েছে, সিগারেটের মতো আপনারা জেনে শুনেই বিষ খেয়েছেন, হায়রে আমেরিকার চাল, বেশ্যাকে ধরেও অসামাজিকতার জন্য বিচার করা সম্ভব হয় না, কারণ বেশ্যার গায়ে আগের থেকে বেশ্যার লগো সার্টিফিকেট দেয়াই থাকে! ইসকোন যখন সংগঠন হিসেবে খুব একটা ভাল করে দাঁড়ায়নি তখন এই সব সাধুরা বলতো আমাদের দেহ মন সব কৃষ্ণের নামে সমর্পণ করেছি, তাই আমরা বৈষয়িক বা জাগতিক ধন সম্পদের আশা করি না, ভাল কথা তাহলে সাধারণ গৃহস্তের এরা জমি, জায়গা কেঁড়ে নেয় কেন? এই সব সাধুরা আরো বলে যে কৃষ্ণের কাছে আমরা যেহেতু সব অর্পণ করেছি, তাই আমাদের ব্যক্তিগত স্বার্থে বিয়ে বা ঘর সংসার করার করাও প্রয়োজন মনে করি না, কারণ আমরা সন্যাসী এবং বিষয় আশাদির উপরে আসক্ত নই তেমনি বউ, বাচ্চা কাচ্চার উপরেও আসক্তি নই, তাই আমরা কৃষ্ণ সন্যাসীরা বিয়ে করি না, ভাল কথা, তাদের অনেক বইয়ে যা এখনো লিখা হয়ে আজো প্রমাণ হয়ে আছে, অথচ ইসকোন প্রতিষ্ঠার শুরুতে যখন সংগঠনটি দরিদ্র ছিল, তখন ইসকোনের কোন সাধুই বিয়ে করার কথা বলে নাই, অধিকিন্তু অনেক বিবাহিত পুরুষও সেই সময়ে বউ , সন্তান ছেড়ে সব ফেলে তাদের আশ্রমে গিয়ে বৈরাগ্য জীবন যাপন করতো! সেই ইসকোনেই যখন হিন্দুদের কাছ থেকে কৃষ্ণের নামে কামাই করে নিজেকে দাঁড় করালো বা করতে সমর্থ হলো তখন সেই মন্দির বা আশ্রমে থাকা নারী কৃষ্ণ ভক্তদের এই সব সাধুরা বিয়ে করার ফন্দি আঁটলো, যে কৃষ্ণ শিশুর জন্য, আশ্রমে থাকা গৃহত্যাগী সন্যাসীরা বিয়ে করতে পারবে, এতদিন যে সব সাধুদের লিঙ্গ জাগেনি, তারাই এখন কৃষ্ণ শিশু উৎপাদনের কথা বলে, ফতোয়া দিচ্ছে, তাদের কথা গৃহ সন্যাসীরা যদি বিয়ে করতে পারে, আমরা আশ্রম সন্যাসীরা কেন বিয়ে করতে পারব না? এই হচ্ছে আশ্রমবাসী কৃষ্ণ সন্যাসীদের বর্তমান বিষয়াদি এবং স্ত্রী পুত্র করে আমার আমার করার আধুনিক নীতিবোধ! এখন ভারত এবং আমেরিকার বড় বড় ইসকোন সাধুরা আশ্রমে থেকে শুধু কৃষ্ণ মোহেই অন্ধ হয়ে নাই, তাদের হাতে এখন কল কারখানা, গরুর খামার, এক কথায় বৈষয়িক আসক্তিতে আসক্ত, এখন নারীকেও তারা ভোগ করতে বাদ দিচ্ছে না? অবাক সংগঠন! ইসকোন ঠাকুরদের ধর্ম এখন ভাতের হাড়িতে, আমিষ, নিরামিষ এবং স্বাত্বিক আহারের সুচিতা নিয়েই তাদের ধর্মের মূল আলোচনার বিষয়, আর হিন্দু হলেও কার হাতে খাওয়া যাবে, কার হাতে যাবে না, কে পায়খানা করে জল নেয় না, কে মাছ খায় , সব সময় এ সব বাজে তথ্য ছড়াই যেন তাদের কাজ! সব ধর্ম যেন তাদের খাওয়া দাওয়ার মধ্যে, অথচ যে আমেরিকায় এরা ধর্ম প্রচার করে, সে আমেরিকাবাসীর একশ ভাগ মানুষেই আমিষ ভোজী! অনির্ভরযোগ্য সুত্রে জানা গেছে এই সব ইসকোন কর্মকর্তারা যারা ভারত থেকে হিন্দু মেয়েদের সন্যাসী করে আমেরিকায় নিয়ে গেছেন , সেই সব মেয়েদের এরা অনেক টাকার বিনিময়ে আমেরিকার ঢনাড্য ব্যক্তিদের কাছে বিয়ে করার কথা বলে বিক্রি করে দেয়, অথচ নামে মাত্র লোক দেখানো এই সব আমেরিকানরা বিয়ে করার কথা বলে নিয়ে গেলেও তাদেরকে এক বছর চুক্তি মাফিক যৌন দাসী বানিয়ে ভোগ করে, চুক্তি শেষ করে আবার আশ্রমে রেখে যায়! এটাও একটাই ইসকোনের গোপন ব্যবসা! যে স্বার্থের কারণে ইসকোনদের মধ্যে অনেক ভিনদেশী ভক্ত পাওয়া যায়, যারাই প্রথম হিন্দু সন্যাসী মেয়েদের প্রথম বিয়ে করা শুরু করে নামকাওয়াস্তে ইসকোনের মন্দিরের শিষ্য হয়! ভদ্রবেশে হিন্দু এবং ভিন দেশী কৃষ্ণ ভক্ত মেয়েদের দিয়ে সুকৌশলে বিয়ে নামক প্রতারণায় আমেরিকা এবং বিদেশী পুরুষদের হাতে তুলে দিয়ে দেহব্যবসা করাই এই সংগঠনের গোপন রহস্য, তা না হলে ভারত থেকে যে এরা প্রতি বছর ৩০.০০০ মেয়ে আমেরিকা , আফ্রিকা , সহ বাইরের দেশে নিয়ে যায় সে সব মেয়েদের হদিস কই? বিষয়টি কি একবার কেউ একবার ভেবে দেখেছেন?, ভেবে দেখেছন কি হিন্দু সন্যাসী মেয়েদের বিয়ে করার কথা বলে কিছু আমেরিকান খ্রীষ্টান , জয়পতাকার ইসকোন মন্দিরে এসে লোক দেখানো কৃষ্ণ ভক্ত হয়ে, দীক্ষা নিয়ে দু এক সপ্তাহ টাপার- টুপুর করে কৃষ্ণ নাম জপে , কেউ হিন্দু সন্যাসীকে নিয়ে ভাগিয়ে যায়, কেউ আবার সরাসরি বিয়ে করে নেয়, কৃষ্ণ ভক্ত হওয়ার অধিকারে তা কি কেউ একবার ভেবে দেখেছেন? বিদেশী লোকদের হঠাৎ করে কৃষ্ণ মন্দিরে এসে দীক্ষা নেওয়ার কারণ কি? এর মূল কারণ হিন্দু সন্যাসী মেয়েদের পার্ট টাইম যৌন ভোগের সুবিধা করে দেওয়া, ইসকোন আমেরিকায় সেই কাজটি সুকৌশলে করে চলছে, আমেরিকানদের সুবিধার্থে! প্রভুপাদের সময়ে এই সব ভন্ড আমেরিকানরা এই সব কু কর্ম করতে পারেনি, জয় পতাকার আমল থেকে সন্যাসীদের মধ্যে সংসার কিংবা আশ্রমে থেকে যৌনজীবন, কিংবা আশ্রমের বাইরে মেয়েদের বিয়ে করার অনুমতি দেয়, বিদেশীরা সেই নিয়মে দু এক সপ্তাহের জন্য দীক্ষা নিয়ে সেই আশ্রমে থাকা হিন্দু সন্যাসী মেয়েদের বিয়ে করে নিয়ে চম্পট দেয়, পরে হিন্দু হিন্দু সন্যাসী মেয়ে ঠিকই দেখে লোক দেখানো কৃষ্ণ ভক্ত হয়ে যে বিদেশি তারে নিয়ে গেলো সে ঠিকই একজন খ্রীষ্টান, এবং মেয়েটি একজন তার গৃহ যৌন কর্মী! এই অবৈধ ব্যবসার জোরে বাইরের দেশ গুলোতে ইসকোন সন্যাসীদের মধ্যে কৃষ্ণ শিশু তৈরীর মাধ্যমে চলছে অলিখিত দেহব্যবসা! সে জন্য বিদেশিদেরও বেশী ভীড় সেখানে লক্ষ্য করা যায়! এর থেকে এটাই বুঝা যায়, কৃষ্ণ নাম জপ করার জন্য বিদেশীরা আশ্রমে কিংবা কৃষ্ণ মন্দিরে ঘুরে না, কৃষ্ণ হিন্দু মেয়েদের যৌনদাসী কিংবা ভোগ করার লালসায় এই সব ভিনদেশী নকল কৃষ্ণ ভক্তরা ঘুরে আশ্রমের দ্বারে দ্বারে?

রবিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

ভারতীয় দর্শন

হিন্দুধর্ম(সনাতনধর্ম)ভারতীয় উপমহাদেশেরবৃহত্তম তথা একটি দেশীয়ধর্মবিশ্বাস।[১]হিন্দু ধর্মাবলম্বীগণ স্বীয় ধর্মমতকেসনাতন ধর্ম(सनातन धर्म) নামেও অভিহিত করেন।[২][৩]হিন্দুধর্মের সাধারণ "ধরনগুলির" মধ্যেলৌকিকওবৈদিক হিন্দুধর্মথেকেবৈষ্ণবধর্মেরঅনুরূপভক্তিবাদীধারার মতো একাধিক জটিল মতবাদগুলির সমন্বয়ের এক প্রচেষ্টা লক্ষিত হয়।যোগ,কর্মযোগধারণা, ওহিন্দু বিবাহেরমতো বিষয়গুলিও হিন্দুধর্মের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত।হিন্দুধর্ম একাধিক ধর্মীয় ঐতিহ্যের সমন্বয়ে গঠিত। এই ধর্মের কোনো একক প্রতিষ্ঠাতা নেই।[৪]লৌহযুগীয় ভারতেরঐতিহাসিক বৈদিক ধর্মেএই ধর্মের শিকড় নিবদ্ধ। হিন্দুধর্মকে বিশ্বের "প্রাচীনতম জীবিত ধর্মবিশ্বাস"[৫]বা "প্রাচীনতম জীবিত প্রধান মতবাদ"[৬][৭][৮][৯]আখ্যা দেওয়া হয়।হিন্দুধর্মকে বলা হয় পৃথিবীর সবচেয়ে পুরাতন ধর্ম[note ১]এবং ধর্মাবলম্বীরা একে সনাতন ধর্ম ("চিরন্তন নিয়ম বা চিরন্তন পথ") বলে আখ্যায়িত করেন[১০]। পশ্চিমা পন্ডিতরা হিন্দুধর্মকে বিভিন্ন ভারতীয় সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের[১১][note ২]সংমিশ্রণ[note ৩]এবং সংশ্লেষণ[১২][note ৪]হিসেবে গন্য করেন যার মূলে একক কোন ব্যক্তির অবদান নেই[১৩]এবংএর একাধিক উৎপত্তি উৎস রয়েছে[১৪][note ৫]। এটি সনাতনি বা চিরন্তন কর্তব্যের কথা যেমন সততা, অহিংসা, ধৈর্যশীলতা, সমবেদনা ও আত্মনিয়ন্ত্রনের পাশাপাশি আরো অনেক কথা বলে।[web ১][১৫]হিন্দু বিশ্বাস অনুযায়ী গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে আছে (কিন্তু এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়)পুরুষাত্মা, যা মানব জীবনের সঠিক উদ্দেশ্য। এর মধ্যে আছে ধর্ম (নীতি), অর্থ, কাম এবং মোক্ষ (জন্ম মৃত্যুর পুন পুন অবস্থা থেকে মুক্তি)[১৬][১৭]; কর্ম (কাজ, অভিপ্রায় ও ফল); এবং বিভিন্ন ধরনেরযোগসাধনা (মোক্ষ লাভের পথ)। হিন্দুদের নিত্যকর্মের তালিকায় আছে পূজা, অর্চনা, ধ্যান, পারিবারিকসংস্কার, বার্ষিক অনুষ্ঠান এবং তীর্থযাত্রা। কেউ কেউ সমাজ ও সভ্য জগতে সুখ শান্তি ছেড়ে মোক্ষ লাভের উদ্দেশ্যেসন্ন্যাসগ্রহন করে।[১৮][১৯]জনসংখ্যার বিচারে হিন্দুধর্মখ্রিষ্টধর্মওইসলামেরপরেই বিশ্বেরতৃতীয় বৃহত্তম ধর্মমত। এই ধর্মের অনুগামীদের সংখ্যা ১০০ কোটিরও বেশি। এদের মধ্যে প্রায় ১০০ কোটি হিন্দু বাস করেনভারতীয় প্রজাতন্ত্রে।[২০][২১]এছাড়ানেপাল(২৩,০০০,০০০),মরিশাস(১৪,০০০,০০০) ওইন্দোনেশীয়দ্বীপবালিতে(৩,৩০০,০০০)উল্লেখযোগ্য সংখ্যায়হিন্দুরা বাস করেন।হিন্দুধর্মের শাস্ত্রগ্রন্থের সংখ্যা প্রচুর। হিন্দুশাস্ত্রশ্রুতিওস্মৃতিনামে দুই ভাগে বিভক্ত। এই গ্রন্থগুলিতেধর্মতত্ত্ব,দর্শনওপুরাণআলোচিত হয়েছে এবংধর্মানুশীলনসংক্রান্ত নানা তথ্য বিবৃতহয়েছে। এই গ্রন্থগুলির মধ্যেবেদসর্বপ্রাচীন, সর্বপ্রধান ও সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ। অন্যান্য প্রধান ধর্মগ্রন্থগুলি হলউপনিষদ্‌,পুরাণ, ওভারতীয় মহাকাব্যরামায়ণওমহাভারত।ভগবদ্গীতানামে পরিচিত মহাভারতেরকৃষ্ণ-কথিত একটি অংশ বিশেষ গুরুত্বসম্পন্ন ধর্মগ্রন্থের মর্যাদা পেয়ে থাকে।[২২]ব্যুৎপত্তিমূল নিবন্ধ:হিন্দুস্তানকারাকোরাম রাজপথউত্তর পাকিস্তানেসিন্ধু নদীঅতিক্রম করেছেহিন্দুশব্দটি উৎসারিত হয়েছে সংস্কৃতসিন্ধুশব্দটি থেকে। সিন্ধুভারতীয় উপমহাদেশেরউত্তর-পশ্চিমাঞ্চলেরএকটি ঐতিহাসিক নদীরনাম।[২৩]ঋগ্বেদেসিন্ধু নদেরস্তুতি করা হয়েছে।[২৪]পরবর্তীকালেরআরবিসাহিত্যেওআল-হিন্দশব্দটির মাধ্যমে সিন্ধুনদ অববাহিকায় বসবাসকারী জনগোষ্ঠীকে বোঝানো হয়েছে।[২৫]ত্রয়োদশ শতাব্দীতেভারতের নামেরসমার্থক শব্দ হিসেবেহিন্দুস্তানবাহিন্দুস্থানশব্দটির উৎপত্তি হয়। এই শব্দের আক্ষরিক অর্থ"হিন্দুদের দেশ"।[২৬]প্রথমদিকেহিন্দুশব্দটি ধর্মনির্বিশেষে ভারতীয় উপমহাদেশের সকল অধিবাসীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ছিল। কেবলমাত্রচৈতন্যচরিতামৃতওচৈতন্য ভাগবতইত্যাদি কয়েকটি ষোড়শ-অষ্টাদশ শতাব্দীরবাংলাগৌড়ীয় বৈষ্ণবধর্মগ্রন্থেযবনবাম্লেচ্ছদেরথেকে হিন্দুধর্মাবলম্বীদের পৃথক করার জন্য শব্দটি বিশেষভাবে ব্যবহৃত হয়ে।[২৭]অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষভাগে ইউরোপীয় বণিক ও ঔপনিবেশিক শাসকেরাভারতীয়ধর্মবিশ্বাসগুলিরঅনুগামীদের একত্রেহিন্দুনামে অভিহিত করে। ধীরে ধীরে এই শব্দটিআব্রাহামীয় ধর্মসমূহঅথবা অবৈদিক ধর্মবিশ্বাসগুলির (যেমনজৈনধর্ম,বৌদ্ধধর্মওশিখধর্ম) অনুগামী নন এবংসনাতন ধর্মনামক ধর্মীয় ঐতিহ্যের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত এমন সকলভারতীয় বংশোদ্ভুতব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয়ে পড়ে।[২৮][২৯]ইংরেজি ভাষাতে ভারতের স্থানীয় ধর্মীয়, দার্শনিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যগুলি বোঝাতেহিন্দুইজমবাহিন্দুধর্মকথাটি চালু হয় ঊনবিংশ শতাব্দীতে।[৩০][পৃষ্ঠার প্রথমে ফেরত্ যান]সংজ্ঞাত্রিবেণী সঙ্গম, অথবাযমুনা নদী,গঙ্গা নদীএবং পৌরাণিকসরস্বতী নদীর মিলনস্থলমঙ্গল মহাদেব, গঙ্গা তলাও এ ১০৮ ফুটেরশিবের মূর্তি,মরিশাসসার্বিক সহিষ্ণুতা থেকে মতবৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য ও হিন্দুধর্মের রক্ষণশীল উদারতাধ্রুপদী পাশ্চাত্য চিন্তাধারায় এই ধর্মের সংজ্ঞা নিরুপণের প্রধান বাধাস্বরূপ।[৩১]হিন্দুধর্ম মূলত একটি ব্যবহারিক ধর্মচেতনা। একাধিক প্রথা, সংস্কার ও আদর্শ এতে সন্নিবেশিত। তাই অনেকের মতে এই ধর্মের একটি সংজ্ঞা নির্ধারণ করা বেশ অসুবিধাজনক।[৩২]সেই কারণে ‘রিলিজিয়ন’ বা ধর্ম অপেক্ষা ‘রিলিজিয়াস ট্র্যাডিশন’ বা ধর্মসংস্কার হিসেবেই একে অধিকাংশ ক্ষেত্রে সংজ্ঞায়িত করা হয়।[১]এই বৈশিষ্ট্য হিন্দুধর্মকে বিশ্বের প্রাচীনতম ধর্মবিশ্বাসের পাশাপাশিবিশ্বের সর্বাধিক বৈচিত্র্যপূর্ণ ধর্মের শিরোপাও দান করেছে।[৬][৩৩][৩৪][৩৫]অধিকাংশ ধর্মীয় সংস্কার পবিত্র ধর্মশাস্ত্রবেদহতে সঞ্জাত। যদিও এর ব্যতিক্রমও দুর্লভ নয়। কোনো কোনো সংস্কার অনুসারে মোক্ষ বা পারত্রিক মুক্তিলাভের জন্য কিছু প্রথানুষ্ঠান অপরিহার্য। যদিও এই ব্যাপারেও মতানৈক্য বিদ্যমান। কোনো কোনো হিন্দু দার্শনিক মহাবিশ্বের সৃষ্টি, স্থিতি ও প্রলয়ের পশ্চাতে এক অস্তিবাদী পরাসত্তারসন্ধান করে ফেরেন, আবার কোনো কোনো হিন্দুনাস্তিকতারচর্চা করে থাকেন। হিন্দুধর্ম কর্মফলের ভিত্তিতে পুনর্জন্মবাদে বিশ্বাস রাখে। মোক্ষ এই ধর্মে জন্ম ও মৃত্যুর চক্রাকার বৃত্ত থেকে মুক্তিরই অপর নাম। যদিও হিন্দুধর্মের ক্ষেত্রের বাইরেবৌদ্ধওজৈনধর্মওএই মতবাদে বিশ্বাস রাখে।[৩২]এই কারণে হিন্দুধর্মকে মনে করা হয় বিশ্বের জটিলতম ধর্মবিশ্বাসগুলির অন্যতম।[৩৬]এই জটিলতা ব্যতিরেকেও হিন্দুধর্ম যে শুধুমাত্র একটি সংখ্যাগতভাবে সুবৃহৎ জনগোষ্ঠীর ধর্মচেতনা তাই নয়, প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে প্রচলিত এই ধর্মবিশ্বাস পৃথিবীর অধুনা বর্তমান ধর্মগুলির মধ্যে প্রাচীনতমও বটে।[৩৭]ভারতের প্রথম উপরাষ্ট্রপতি তথা বিশিষ্ট দার্শনিকসর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণনহিন্দুধর্মের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে একে “একটি বিশ্বাসমাত্র” বলতে অস্বীকার করেন। বরং এই ধর্মের যুক্তি ও দর্শনের দিকটি বিচার করে তিনি খোলাখুলিভাবেই এই মত ব্যক্ত করেন যে হিন্দুধর্মের সংজ্ঞা দান করা অসম্ভব। শুধুমাত্র এই ধর্ম অনুশীলনই করা যায়।[৩৮]তেমনই কোনো কোনো পণ্ডিত সুসংজ্ঞায়িত ও রক্ষণশীল ধর্মীয় সংগঠন না বলে হিন্দুধর্মকে “অস্পষ্ট সীমানায়” বর্গায়িত করার পক্ষপাতী। কয়েকটি ধর্মমত হিন্দুধর্মে কেন্দ্রীয়। অন্যগুলি ঠিক কেন্দ্রীয় না হলেও এই পরিসীমার আওতার মধ্যেই পড়ে। এরই ভিত্তিতে ফেরো-লুজি হিন্দুধর্মের সংজ্ঞায়নে একটি “উদাহরণমূলক তাত্ত্বিক অন্বেষণ” (“প্রোটোটাইপ থিওরি অ্যাপ্রোচ”) চালিয়েছেন।[৩৯]উনবিংশ শতকে হিন্দু পুনর্জাগরণবাদীগণ ‘হিন্দু-ইজম’ শব্দটির প্রয়োগ শুরু করার পর থেকেই হিন্দুধর্ম একটি বিশ্বধর্ম হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।[২]এছাড়াও শব্দটির প্রাথমিক প্রয়োগ ঘটিয়েছিলেন পশ্চিমা প্রাচ্যবিদ বা ‘প্রথম যুগের ভারততত্ত্ববিদগণ’, যাঁদের বক্তব্য সাধারণত একপেশে ছিল বলে মনে করা হয়। যদিও হিন্দুধর্মের শিকড় ও তার বিভিন্ন শাখাপ্রশাখার প্রাচীনত্বের ব্যাপারে কোনো দ্বিমত নেই। সকলেই স্বীকার করেছেন যে প্রাগৈতিহাসিক সিন্ধু সভ্যতা থেকেঐতিহাসিক বৈদিক সভ্যতারপ্রাথমিক পর্ব জুড়ে ছিল হিন্দুধর্মের সূচনালগ্ন।[৪০]কেবলমাত্র ধর্মবৈভিন্ন প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে বৈদিক সংস্কারের ভিত্তিতে হিন্দুধর্মের একটি রূপ দান করেছেন পশ্চিমা প্রাচ্যবিদগণ – এমন কথাও বলেছেন কেউ কেউ। কিন্তু তা সত্য নয়।[৪১][৪২][৪৩]সংজ্ঞা বা ‘হিন্দুইজম’ বা হিন্দুধর্ম শব্দটির দ্বারা কি বোঝায় তা এই কারণেই বলা সম্ভব নয় যে এই ধর্মের কোনো একক প্রতিষ্ঠাতা নেই। হিন্দুধর্মে, বা কারো কারোভাষ্য অনুযায়ী হিন্দুধর্মসমূহে মোক্ষলাভের প্রণালীটি এক এক সম্প্রদায়ের নিকট এক এক প্রকার।বৈদিক ধর্মেরযে রূপগুলিপরিলক্ষিত হয়, তা হিন্দুধর্মের বিকল্প নয় - বরং তার প্রাচীনতম রূপ। তাই পশ্চিমা প্রাচ্যবিদদের লেখায়বৈদিক ধর্ম,ব্রাহ্মণ্যবাদও হিন্দুধর্মের মধ্যে যে প্রভেদ দেখানো হয়ে থাকে তারও বিশেষ যুক্তি নেই।[৯][৪৪]কেউ কেউ মনে করেন, হিন্দুধর্মে কোনো “অনুশাসনের আকারে নিবদ্ধ কোনো একক ধর্মীয় বিশ্বাস” প্রচলিত নেই। এই জন্য ইসলামের বিরাট সংগঠনের পাশে এটিকে এক সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের ধর্মব্যবস্থা বলে অভিহিত করা হয়। আবার কেউ কেউইহুদি ধর্মেরসঙ্গে এর ঘনিষ্ঠ একাত্মতার কথাও বলে থাকেন।[৩২]পাশ্চাত্য দৃষ্টিকোণ থেকে, ধর্ম কি এবং কিভাবে তা আরও প্রাচীন ধর্মবিশ্বাসগুলির সঙ্গে সম্পর্কিত তারই বিচারে হিন্দুধর্মকে যাচাই করা হয়।[৪৫]‘ধর্মবিশ্বাস’ (‘ফেইথ’) শব্দটি ‘ধর্ম’ (‘রিলিজিয়ন’) অর্থে প্রয়োগের ফলে এই বিষয়ে জটিলতা বৃদ্ধি পায়।[৩২]কোনো কোনো পণ্ডিত[৪৬]এবং অনেক হিন্দু দেশীয় ‘সনাতন ধর্ম’-এর সংজ্ঞাটির পক্ষপাতী। এইসংস্কৃতশব্দবন্ধটির অর্থ ‘চিরন্তন ধর্ম (বিধি)’ বা ‘চিরন্তন পন্থা’।[২

মহাভারত২

প্রতীক নির্দেশিকা*.পুরুষ:নীল সীমানা*.মহিলা:লাল সীমানা*.পাণ্ডব:সবুজ বাক্স*.কৌরব:হলুদ বাক্সসংক্ষিপ্ত কাহিনিমূল নিবন্ধ:মহাভারতের কাহিনিমহাভারতের কাহিনি এতটাই বৃহৎ, ঘটনাবহুল ও প্রাসঙ্গিক কাহিনিসমূহ দ্বারা পূর্ণ যে, সম্পূর্ণ ঘটনাটিকে সংক্ষেপে বিবৃত করা অত্যন্ত জটিল। নীচে মহাভারতের একটি প্রাথমিক রূপরেখা দেওয়া হল।পূর্বকথাভীষ্মব্রহ্মচর্যপালন করার প্রতিজ্ঞা করছেন;রাজা রবি বর্মারঅঙ্কিত চিত্রকুরুবংশীয় রাজাজনমেজয়েরপূর্বপুরুষ কুরুরাজ্যের রাজধানী হস্তিনাপুরের মহারাজশান্তনুরসময় থেকে মহাভারতের মূল কাহিনী শুরু হয়। শান্তনুগঙ্গাদেবীকেবিবাহ করেন ও পরপর সাত সন্তানের মৃত্যুর পর তাঁদের অষ্টম সন্তান দেবব্রত জন্মালে গঙ্গা অন্তর্হিত হন। দেবব্রত বিদ্যা ও বলে নিপুণ ছিলেন, অতঃপর শান্তনু এঁকে যুবরাজ পদে নিয়োগ করেন। একদা, শান্তনু মৃগয়াহেতু বনে গেলে নদীর ধারেসত্যবতী(মৎস্যগন্ধা) নামে এক পরমা সুন্দরী ধীবর কন্যার সন্ধান পান। শান্তনু তাঁর কাছে বিবাহের প্রস্তাব রাখেন।কিন্তু সত্যবতীর পিতা জানান, রাজার সাথে সত্যবতীর বিবাহ হলে সত্যবতীর পুত্রেরাই রাজ্যশাসন করবে, দেবব্রত নয়। শান্তনুর এই বিপাকের সমাধান করতে বিশ্বস্ত পুত্র দেবব্রত প্রতিজ্ঞা করেন যে, তিনি কদাপি সিংহাসনে বসবেন না। আবার তাঁর পুত্র হলে তারা সিংহাসন নিয়ে দ্বন্দ্ব করবে, এই আশঙ্কায় তিনি বিবাহ না করবারও সিদ্ধান্ত নেন। দেবব্রতর এই ভীষণ প্রতিজ্ঞার জন্য তিনি ‘ভীষ্ম’ নামে খ্যাত হন ও ইচ্ছামৃত্যুর বর লাভ করেন।সত্যবতীর দুটি সন্তান জন্মায় –চিত্রাঙ্গদওবিচিত্রবীর্য। শান্তনুর মৃত্যুর পর চিত্রাঙ্গদ রাজপদে বসলেও অহংকার তাঁর শীঘ্রপতন ডেকে আনে। দুর্বল বালক বিচিত্রবীর্যকে সিংহাসনে বসানো হয়। এই সময় কাশীরাজ তাঁর তিন কন্যা –অম্বা,অম্বিকাওঅম্বালিকারস্বয়ম্বরের আয়োজন করলে, ভীষ্ম ঐ তিন কন্যাকে হরণ করেন এবং অম্বিকা ও অম্বালিকার সাথে বিচিত্রবীর্যের বিবাহ হয়।কিন্তু,অম্বাজানায় যে সে রাজাশাল্বকেবিবাহ করতে চায়।ভীষ্মতাকে শাল্বের কাছে ফিরিয়ে দিতে গেলে শাল্ব এক অপহৃতা নারীকে বিবাহ করতে অস্বীকার করে। তখন অম্বা ভীষ্মের পাণিগ্রহণ করতে চাইলে ভীষ্ম জানান, তিনিও অপারগ। এ শুনে অম্বা রাগে, হতাশায় ও অপমানে ভীষ্মকে তার পরম শত্রু বলে গণ্য করে ও প্রতিজ্ঞা করে যে পরজন্মে সে ভীষ্মের ওপর এই অপমানের চরম প্রতিশোধ নেবে। এই হেতু সে পরজন্মে পাঞ্চালরাজ দ্রুপদের কন্যাশিখণ্ডীরূপে জন্ম নেয় ও কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে পরোক্ষভাবে ভীষ্মের পতনের কারণ হয়েদাঁড়ায়।পাণ্ডব ও কৌরবদের জন্মদ্রৌপদীতাঁর পঞ্চস্বামীর সাথে - সিংহাসনেযুধিষ্ঠিরউপবিষ্ট, নীচেভীমওঅর্জুন, দু'পাশেনকুলওসহদেবদণ্ডায়মানবিচিত্রবীর্যঅপুত্রক অবস্থাতেইযক্ষ্মারোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। রাজ্যের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিতসত্যবতীব্যাসদেবকেঅনুরোধ করেন দুই বিধবা রানিকে পুত্রলাভের বর দেওয়ার জন্য। কিন্তু ব্যাসদেব একে একে দুই রানির সামনে উপস্থিত হলে ব্যাসের ভয়ংকর রূপ দেখেঅম্বিকানিজের চোখ বন্ধ করেফেলে ওঅম্বালিকারশরীর পাণ্ডুবর্ণ ধারণ করে। রানিদের এই অক্ষমতার জন্য অম্বিকার পুত্রধৃতরাষ্ট্রজন্মান্ধ হয় ও অম্বালিকার পুত্রপাণ্ডুরদেহ ধূসরবর্ণের হয়। বংশধরদের এই শারীরিক অক্ষমতা দেখে সত্যবতী ব্যাসদেবকে আবার ডেকে পাঠান বরদানের জন্য। কিন্তু এবার রানিরা নিজে না গিয়ে তাদের এক দাসীকে পাঠায় ও সেই দাসীর পুত্রবিদুরঅতি ধার্মিক চরিত্র নিয়ে জন্মান, পরে এঁকেই কুরুরাজ্যের মহামন্ত্রী পদে অধিষ্ঠিত করা হয়।তিন পুত্র প্রাপ্তবয়স্ক হলেভীষ্মজ্যেষ্ঠপুত্র ধৃতরাষ্ট্রকে রাজা করতে চান, কিন্তু বিদুর উপদেশ দেন যে অন্ধ পুত্রকে রাজা বানানো মূর্খামি হবে। তাই, রাজমুকুট পাণ্ডুরমস্তকে স্থান পায়। এরপর ধৃতরাষ্ট্রের বিবাহ হয়গান্ধারীএবং পাণ্ডুর বিবাহ হয়কুন্তীওমাদ্রীরসঙ্গে। স্বামীর অন্ধত্বেরজন্য মহীয়সী নারী গান্ধারী নিজের চোখ দুটিকেও আমরণ ঢেকে রেখেছিলেন। কিন্তু গান্ধারীর এই দশা দেখে তাঁর ভ্রাতাশকুনিক্রুদ্ধ হন ও কুরুরাজবংশের ওপর প্রতিশোধ নেবার পণ করেন। রাজা হবার পর পাণ্ডু স্ত্রীদের সাথে অরণ্য ভ্রমণে যান ও দুটি হরিণ দেখে তাদের তীরবিদ্ধ করেন। দুর্ভাগ্যবশত, ঐ দুই হরিণ বাস্তবে ছিল এক ঋষিও তাঁর স্ত্রী। ক্রুদ্ধ ঋষি মৃত্যুর পূর্বে পাণ্ডুকে অভিশাপ দেন, কোনো স্ত্রীর সাথে বৈবাহিক সম্পর্কে লিপ্ত হলে পাণ্ডুর মৃত্যুহবে। অনুতপ্ত পাণ্ডু রাজ্য ত্যাগ করে স্ত্রীসহিত বনবাসী হন। ধৃতরাষ্ট্রকে রাজপদে অধিষ্ঠিত করা হয়।কুন্তী বাল্যকালে ঋষি দুর্বাসার কাছ থেকে এক মন্ত্র লাভ করেন, যার মাধ্যমে যে কোনো ভগবানকে আহ্বান করা যায় ও বর চাওয়া যায়। কুন্তী কৌতূহলবশত সূর্যদেবকে আহ্বান করেন, সূর্যদেব তাঁকে এক পুত্রের বর দেন। কিন্তু লোকলজ্জার ভয়ে সবার অজান্তে কুন্তী ঐ শিশুপুত্রকে নদীতে ভাসিয়ে দেন, যে পরে অধিরথ সারথির কাছে পালিত হয় ও তার নাম হয়কর্ণ। ঐ মন্ত্রের দ্বারা কুন্তী ধর্মদেবের বরেযুধিষ্ঠির, পবনের বরেভীম, ইন্দ্রের বরেঅর্জুননামে তিন গুণবান পুত্রের জন্ম দেন। মাদ্রী এই মন্ত্রের পাঠ করে অশ্বিনীকুমারদ্বয়ের বরেনকুলওসহদেবনামেদুই পুত্র লাভ করেন। এই পাঁচ পুত্রই অত্যন্তগুণবান ও সৎ ছিলেন, পরবর্তীতে এরা ‘পাণ্ডব’ নামে পরিচিত হন। কিন্তু একদিন কামোদ্যত পাণ্ডু মাদ্রীকে আলিঙ্গন করতে গিয়ে মারা যান। দুঃখে মাদ্রী পাণ্ডুর চিতায় সহমরণ গ্রহণ করেন। শিশুপুত্রদের ভার পড়ে কুন্তীরওপর।এদিকে যুধিষ্ঠির ও ভীমের জন্মের পর একশোটি ঘৃতপূর্ণ কলশ থেকে ধৃতরাষ্ট্র ও গান্ধারীর ১০০ সন্তান জন্মায়। এদের মধ্যে জ্যেষ্ঠ হলদুর্যোধনও এরপরদুঃশাসন, বিকর্ণ প্রভৃতি, এছাড়া ধৃতরাষ্ট্ররদুঃশলানামে এক কন্যাও হয়। ধৃতরাষ্ট্রের পুত্ররা ‘কৌরব’ নামে পরিচিত হয়, এই কৌরবরা তেমন সচ্চরিত্রবান ও ধার্মিক ছিল না।জতুগৃহদাহপাণ্ডুওমাদ্রীরমৃত্যুর পরকুন্তীতাঁর পাঁচ সন্তানকে নিয়েহস্তিনাপুরেফিরে আসেন। পাণ্ডব ও কৌরবরাদ্রোণাচার্যেরকাছে তাদের বাল্যশিক্ষা সম্পন্ন করে। গুরু দ্রোণশিষ্যদের কাছে দক্ষিণা হিসেবে তাঁর প্রতারকবন্ধু পাঞ্চালরাজদ্রুপদকেপরাজিত করতে বলেন। রাজকুমারদের সাথে যুদ্ধে দ্রুপদ পরাজিত হলে দ্রোণকে শায়েস্তা করার পরিকল্পনা করতে থাকেন। এসময়কর্ণকৌরবদের পরম মিত্রে পরিণত হয়। এদিকে সর্বজ্যেষ্ঠযুধিষ্ঠিরযুবরাজ পদে অভিষিক্ত হলে কৌরবরা ঈর্ষান্বিত হয়, এমনকি ‘পুত্রস্নেহে অন্ধ’ধৃতরাষ্ট্রওদুর্যোধনকে রাজা হিসেবে দেখতে চান।অতঃপর কৌরবরা ও তাদের মাতুলশকুনিপাণ্ডবদের গোপনে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করে।শকুনির নির্দেশে স্থপতি পুরোচনবারণাবতনামক স্থানে বিভিন্ন দাহ্য পদার্থ দিয়ে ‘জতুগৃহ’ নামে এক সুশোভন প্রাসাদ নির্মাণ করেও সেখানে পাণ্ডব ও কুন্তীকে ছুটি কাটাবার পরামর্শ দেয়।বিদুরশকুনির ষড়যন্ত্র বুঝতে পেরে পাণ্ডবদের সাবধান করে ও জতুগৃহে আগুন লাগলে তাঁরা এক সুড়ঙ্গপথে পালিয়ে আসেন ও সকলে মনে করে তাঁদের মৃত্যু হয়েছে।দ্রৌপদীর বিবাহস্বয়ংবরেঅর্জুনেরলক্ষবিদ্ধকরণ,কর্ণাটকেরচেন্নকেশব মন্দির,ভারতএই সময় দ্রুপদ যজ্ঞ করেধৃষ্টদ্যুম্নওদ্রৌপদীনামে দুই পুত্র-কন্যা লাভ করেন। পাণ্ডবরা ব্রাহ্মণের ছদ্মবেশে ঘুরে বেড়াবার সময় দ্রৌপদীর স্বয়ংবর সভা আয়োজিত হয়। ঘোষিত হয়, উঁচুতে ঝুলন্ত মাছের চোখটির প্রতিবিম্ব নিচে জলে দেখে ঘূর্ণায়মান চক্রের মধ্য দিয়ে যে রাজকুমারচোখটিকে শরবিদ্ধ করতে পারবে, সে দ্রৌপদীকে পত্নী হিসেবে লাভ করবে। অধিকাংশরাই এতে অসমর্থ হয় ওকর্ণসাফল্যের সীমায় এলেও সূতপুত্র হিসেবে পরিচিত হওয়ায় দ্রৌপদী তাঁকে গ্রহণ করেন না। ব্রাহ্মণবেশীঅর্জুনএই পরীক্ষায় সমর্থ হয় ও দ্রৌপদীকে লাভ করেন। কিন্তু দ্রৌপদীকে নিয়ে পাণ্ডবরা কুন্তীর কাছে ফিরে এলে পাণ্ডবরা জানায় অর্জুন ভিক্ষায় এক দারুণ জিনিস পেয়েছেন।কুন্তীনা দেখেই মন্তব্য করেন, “যা পেয়েছ, পাঁচ ভাই মিলে ভাগ করে নাও।” ধর্মসংকটে পড়েন পাণ্ডবেরা। অতঃপর দ্রৌপদীকে পঞ্চপাণ্ডবেরই স্ত্রী হিসেবে পরিচিত হতে হয়।ইন্দ্রপ্রস্থ নির্মাণএরপর পাণ্ডবরা হস্তিনাপুরে ফিরে আসেন। পাণ্ডবদের সাথে কলহ করা উচিত হবে না ভেবে ধৃতরাষ্ট্র কুরুরাজ্যের এক অংশ তাঁদেরকে দিয়ে দেন, যেখানে পাণ্ডবরা ‘খাণ্ডবপ্রস্থ’ নামের তাঁদের নিজস্ব রাজ্য স্থাপন করেন।ময়দানবসেখানে ‘ইন্দ্রপ্রস্থ’ নামে এক অতি সুন্দর রাজধানী নগর তৈরী করে দেয়। যুধিষ্ঠির রাজপদে অধিষ্ঠিত হন,যদিও এর মাধ্যমে পাণ্ডব বা কৌরব কেউই সুখী হতে পারেনি।এই সময় অর্জুন দ্বারকাধিপতিশ্রীকৃষ্ণেরভগিনীসুভদ্রাকেবিবাহ করেন। নিজের রাজ্যেরউন্নতিসাধন করতেযুধিষ্ঠিরকৃষ্ণের উপদেশ চান।কৃষ্ণতাঁকেরাজসূয় যজ্ঞকরেআর্যাবর্তেরচক্রবর্তী সম্রাট পদে আরোহণ করার পরামর্শ দেন। যুধিষ্ঠিরের এই পদোন্নতিসাধনের জন্য চার ভাই মিলে দিগ্বিজয়ে পাড়ি দেন ও আর্যাবর্তের সকল রাজাকে হারিয়ে কর আদায় করেন।রাজসূয় যজ্ঞকালে আমন্ত্রিত চেদীরাজশিশুপালভয়ানকভাবে কৃষ্ণকে অপমান করেন ও কৃষ্ণ পাপী শিশুপালের মস্তকচ্ছেদ করেন। ইন্দ্রপ্রস্থের অপরূপ শোভা দেখে দুর্যোধন ঈর্ষান্বিত হন। মায়াবী রাজপুরীর স্বচ্ছ স্ফটিককে তিনি জল ভেবে ভুল করেন ও পাশ কাটিয়ে যান। আবার সরোবরের জলকে স্ফটিক মনে করে তার ওপর দিয়ে হাঁটতে গিয়ে জলে ভিজে যান। দুর্যোধনের এই হাস্যকর অবস্থা দেখে দ্রৌপদী মন্তব্য করেন, “অন্ধের (ধৃতরাষ্ট্র)পুত্র কি অন্ধই হয়?”। এতে দুর্যোধন অত্যন্তঅপমানিত বোধ করেন ও দ্রৌপদীর ওপর প্রতিশোধ নেবেন ঠিক করেন।দ্যূতক্রীড়া ও বস্ত্রহরণদুঃশাসনকর্তৃকদ্রৌপদীরবস্ত্রহরণপাণ্ডবদের ওপর প্রতিশোধ নেবার জন্য এবারশকুনিযুধিষ্ঠিরের সঙ্গে কপটপাশা খেলারআয়োজন করেন। শকুনির ছলনায় যুধিষ্ঠির তাঁররাজ্য, সম্পত্তি সমস্ত হারান। শেষে নিঃস্ব হয়ে ভাইদেরকে, এমনকি নিজেকেও বাজি রাখেন এবং সবাই দাসে পরিণত হন। এবার খেলার নেশায় ধর্মজ্ঞান হারিয়ে তিনি স্ত্রীদ্রৌপদীকেবাজি রাখেন ও হেরে তিনিও দাসী হন।দুর্যোধনেরনির্দেশেদুঃশাসনঅন্তঃপুর থেকেদ্রৌপদীকেকেশাকর্ষণ করে সভায় টেনে আনেন, অথচ সভায় উপস্থিত ধার্মিকভীষ্ম,দ্রোণ,বিদুর,পাণ্ডবরা ধর্মসংকটে পড়ে অবিচারের বিরুদ্ধে কোনো প্রতিবাদ করতে পারেন না।কর্ণওকৌরবদের সায় দিয়ে দ্রৌপদীকে অপমান করেন। এবারদুঃশাসনদ্রৌপদীকে সর্বসমক্ষে বস্ত্রহীন করতে গেলে অসহায় দ্রৌপদীভগবান কৃষ্ণকেস্মরণ করেন।কৃষ্ণমায়ার প্রভাবে দ্রৌপদীর গায়ে কাপড়জড়িয়ে তাঁর সম্মানরক্ষা করেন।তখন ধৃতরাষ্ট্র ভয়ভীত হয়ে পাণ্ডবদের সকল সম্পত্তি ফিরিয়ে দেন। স্বাভাবিকভাবেই,দুর্যোধনঅসন্তুষ্ট হয় ও পুনর্বার পাশা আয়োজিত হয়। এবার পাণ্ডবরা হেরে গেলে তাঁদের জন্য ১২ বছরের বনবাস ও ১ বছরের অজ্ঞাতবাস নির্ধারিত হয়। স্থির হয়, এই সময়কালে কৌরবরা পাণ্ডবদের সমস্ত সম্পত্তি ভোগ করবে। অজ্ঞাতবাসের সময় পাণ্ডবদের নিজেদের পরিচয় গোপন রাখতে হবে, কিন্তু কৌরবদের দ্বারা সেই পরিচয় আবিষ্কৃত হলে পাণ্ডবদের আবার ১২ বছর বনবাস ভোগ করতে হবে।বনবাস ও অজ্ঞাতবাসএরপর পাণ্ডবরা ১২ বছর বিভিন্ন বনে ভ্রমণ করতে থাকেন। এই সময় তাঁদের নানা বিপদের সম্মুখীন হতে হয়, তবে সমস্ত বিপদকে জয় করে পাণ্ডবরা তাঁদের বনবাসকাল সম্পূর্ণ করেন।অজ্ঞাতবাসের সময় পাণ্ডবেরা ছদ্মবেশে মৎস্যদেশেবিরাটরাজার রাজ্যে আশ্রয় গ্রহণকরেন।যুধিষ্ঠিরকঙ্ক(রাজার সভাসদ),ভীমবল্লভ(রন্ধনশালার পাচক),অর্জুনবৃহন্নলা(রাজকুমারীদের সঙ্গীত শিক্ষক),নকুলগ্রন্থিক(অশ্বশালা রক্ষক),সহদেবতন্ত্রিপাল(গাভীশালা রক্ষক) ওদ্রৌপদীসৈরিন্ধ্রী(রানির দাসী) নাম গ্রহণ করে ছদ্মবেশে বসবাস করতে থাকেন। এই সময় বিরাটের শ্যালককীচকদ্রৌপদীকে অপমান করেন ও ভীম তাঁকে হত্যা করেন। কৌরবরা পাণ্ডবদের অবস্থান আঁচ করতে পেরে মৎস্যরাজ্যে আসেন ও যুদ্ধ ঘোষণা করেন। কিন্তু তাঁরা পাণ্ডবদের ঠিক সেই সময় শনাক্ত করেন, যখন অজ্ঞাতবাসের সময় পূর্ণ হয়ে গিয়েছে। এরপর বিরাট তাঁর কন্যা উত্তরার সাথে অর্জুন-সুভদ্রার পুত্র অভিমন্যুর বিবাহ দেন।এবার পাণ্ডবেরা তাঁদের হারানো অধিকার ফিরে পেতে চাইলে কৌরবরা তা প্রত্যার্পণ করতে সম্পূর্ণ অস্বীকার করেন। ফলে পাণ্ডব ও কৌরবের মধ্যে সংঘর্ষ অনিবার্য হয়ে ওঠে।কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধঅর্জুনেরপ্রতিশ্রীকৃষ্ণেরউপদেশকুরুরাষ্ট্রে সামন্তপঞ্চকেকুরুক্ষেত্রনামে এক পুণ্যক্ষেত্রে মহাযুদ্ধের প্রস্তুতি পর্ব শুরু হয়।পাণ্ডবওকৌরবদেরউদ্যোগে সমস্তআর্যাবর্তেররাজ্যসমূহ দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে।কৃষ্ণতথাদ্বারকারসাহায্য প্রার্থনায়অর্জুনওদুর্যোধনউভয়েই একই সময়ে দ্বারকায় যান। কিন্তু কৃষ্ণের ভ্রাতাবলরামযুদ্ধে অংশ না নিয়ে তীর্থযাত্রার সিদ্ধান্ত নেন। আরকৃষ্ণউভয় দলের আবেদন রক্ষাহেতু অস্ত্রধারণ না করার প্রতিজ্ঞা করে পাণ্ডবদের পরামর্শদাতা রূপে নিজে পাণ্ডবপক্ষে যোগ দেন এবং কৌরবপক্ষে দ্বারকার দুর্জয় নারায়ণী সেনা দান করেন। আপাতদৃষ্টিতে এতে কৌরবপক্ষই লাভবান হলেও স্বয়ং ধর্মরক্ষক ভগবানবিষ্ণুরঅবতারকৃষ্ণনিজে পাণ্ডবপক্ষে থাকায় তারাই লাভবান হয়।এদিকেকৃষ্ণযুদ্ধ না করলেও যুদ্ধেঅর্জুনেররথের সারথির ভূমিকা গ্রহণ করেন। তিনি পাণ্ডবদের শান্তিদূত রূপেকৌরবদেরকাছে পাণ্ডবদের জন্য পাঁচটি গ্রাম ভিক্ষা করেন। কিন্তুদুর্যোধনকঠোরভাবে ঐ প্রস্তাবঅস্বীকার করে বলেন, “বিনা যুদ্ধে নাহি দেব সূচ্যগ্র মেদিনী”।কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধেরচিত্র,আঙ্কোর ভাটমন্দির,কম্বোডিয়াঅতঃপর যুদ্ধ শুরু হয়। কিন্তু যুদ্ধের প্রাক্কালে নিজের আত্মীয়-স্বজনদের সাথেই সংঘর্ষে লিপ্ত হতে হবে দেখে মহাবীরঅর্জুনজাগতিক মোহের বশে পড়ে যুদ্ধ হতে বিরত হবার সিদ্ধান্ত নিয়ে অস্ত্রত্যাগ করেন। এমতাবস্থায় পরমেশ্বরশ্রীকৃষ্ণতাঁর প্রিয়সখা অর্জুনকে পুনরুজ্জীবিত করবার জন্য কিছু মহান উপদেশ প্রদান করেন ও অর্জুন পুনরায় অস্ত্রধারণ করেন। ভগবান শ্রীকৃষ্ণের এই উপদেশগুলিই হিন্দুদের প্রধান ধর্মগ্রন্থ ‘ভগবদ্গীতা’ হিসেবে গণ্য হয়। শ্রীকৃষ্ণ জানান, মহাযুদ্ধে অধর্মের বিনাশহেতু ভগবান নিজেই রয়েছেন, অর্জুন তার উপলক্ষ মাত্র। এরপর তিনি অর্জুনকে তাঁর দিব্য ‘বিশ্বরূপ’ প্রদর্শন করান।প্রথমে যুদ্ধপাণ্ডবওকৌরবপক্ষে যথাক্রমেধৃষ্টদ্যুম্নওভীষ্মকেসেনাপতি পদে বরণ করা হয়। উভয়পক্ষই এইসময় যুদ্ধে জয়লাভ করার জন্য নীতিভঙ্গ করতে থাকে –যুদ্ধের ১০ম দিনেঅর্জুনশিখণ্ডীকে(পূর্বজন্মেঅম্বা) সাথে রেখে নিরস্ত্র ভীষ্মের ওপর ক্রমাগত বাণবর্ষণ করতে থাকেন ও এই বাণ দ্বারা ভীষ্ম শরশয্যায় শায়িত হয় ওতার পতন ঘটে। অর্জুনের পুত্রঅভিমন্যুকৌরবদের চক্রব্যুহে প্রবেশ করলেও বের হবার উপায় না জানায় একা ‘সপ্তরথী’র সাথে যুদ্ধ করে নিহত হয়।এরপর কৃষ্ণের মন্ত্রণায়ভীমঅশ্বত্থামা নামে একটি হাতিকে মারে ও সত্যবাদীযুধিষ্ঠিরদ্রোণকেতাঁর পুত্রের মৃত্যুর মিথ্যা সংবাদ জানায়(“অশ্বত্থামাহত, ইতি গজ।”)। শোকে দ্রোণ অস্ত্রত্যাগ করলে দ্রৌপদীর ভ্রাতাধৃষ্টদ্যুম্নতাঁকে বধ করেন। ভীমদুঃশাসনেরবুক চিরে রক্তপান করেন।কর্ণ-অর্জুনের যুদ্ধে কর্ণের রথের চাকা মাটিতে বসে যায় ওকর্ণচাকা তুলতে গেলে অর্জুন তাঁকে বধ করেন। যুধিষ্ঠিরশল্যকেওসহদেবশকুনিকেবধ করেন। একে একে সবার মৃত্যু হয়। শেষেভীমকৃষ্ণের ইঙ্গিতে অন্যায়ভাবে গদা দ্বারাদুর্যোধনেরঊরুভঙ্গ করে তাঁকে বধ করেন। কিন্তু গভীর রাতেঅশ্বত্থামাপাণ্ডব শিবিরে প্রবেশ করে দ্রৌপদীর পঞ্চপুত্র, ধৃষ্টদ্যুম্ন প্রভৃতিদের হত্যা করেন। ক্রুদ্ধ পাণ্ডবেরা অশ্বত্থামার মস্তকের মণি হরণ করেন ও জরাগ্রস্ত অমর অশ্বত্থামা নিরুদ্দিষ্ট হন।এই রূপে ১৮ দিনের মহাযুদ্ধে পাণ্ডবেরা জয়ী ঘোষিত হন।যদুবংশ ধ্বংস ও মহাপ্রস্থানএরপর যুদ্ধে মৃতদের সৎকারের সময় আসে। শতপুত্র হারানোর শোকেগান্ধারীকৃষ্ণকেএই মহাধ্বংসের জন্য দায়ী করেন ও কৃষ্ণকে অভিশাপ দেন যে, কুরুবংশের মতই কৃষ্ণের যদুবংশও ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে। অবশেষেযুধিষ্ঠিরকেরাজপদে অভিষিক্ত করা হয়। শরশয্যায় শায়িতভীষ্মও এরপর স্বর্গে গমন করেন। যুধিষ্ঠির যুদ্ধজনিত পাপখণ্ডন করার জন্য অশ্বমেধ যজ্ঞের আয়োজন করেন। তাঁর রাজত্বে সুখ, শান্তি, শক্তি, সমৃদ্ধি সবই ছিল। এরপর ধৃতরাষ্ট্র, গান্ধারী, কুন্তী ও বিদুর বানপ্রস্থ গ্রহণ করে অরণ্যচারী হন ও পরে তাঁদের মৃত্যু ঘটে।কিন্তু ৩৬ বছর পর গান্ধারীর অভিশাপের ফলস্বরূপকৃষ্ণেরযদুবংশের সদস্যরা প্রভাস তীর্থে মদ্যপ অবস্থায় পরস্পরের সাথে অন্তর্দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয়ে মুষল যুদ্ধে প্রাণ হারান।বলরামশেষনাগ রূপে দেহত্যাগ করেন এবং সামান্য এক ব্যাধের নিক্ষিপ্ত শরে কৃষ্ণ নির্বাণপ্রাপ্ত হন। এমনকিদ্বারকানগরীও সমুদ্রে নিমজ্জিত হয়।এসমস্ত অশুভ লক্ষণ প্রত্যক্ষ করেপাণ্ডবেরারাজ্যত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন ও অভিমন্যুর পুত্রপরীক্ষিৎকেসিংহাসনে বসিয়ে পঞ্চপাণ্ডব ওদ্রৌপদীহিমালয়ের পথে গমন করেন। এটি ‘মহাপ্রস্থান’ নামে পরিচিত। কিন্তু নিজেদের জীবনের কিছু ত্রুটি থাকার দরুন যুধিষ্ঠির বাদে কেউই স্বশরীরে স্বর্গেযেতে পারেন না, পথেই তাঁদের মৃত্যু হয়। তবে দ্রোণকে মিথ্যা বলবার জন্যযুধিষ্ঠিরকেওএকবারনরকদর্শন করতে হয়। এইভাবে তাঁরা সুখে-শান্তিতে স্বর্গসুখ ভোগ করতে থাকেন।বিভিন্ন সংস্করণ ও অনুবাদসটীক সংস্করণসময়ের সাথে সাথে মহাভারতের কাহিনী বিভিন্নভাবে পরিবর্তিত হয়। ফলে মূল কাহিনীটিকে উপলব্ধি করা দুরূহ হয়ে পড়ে। এই সমস্যার সমাধান করতে পুণেতে অবস্থিত ভাণ্ডারেকর প্রাচ্য গবেষণা সংস্থা (১৯১৯-১৯৬৬ সালে) সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ায় প্রাপ্ত মহাভারতের প্রায় সমস্ত পাণ্ডুলিপির (প্রায় ১০,০০০) অনুসন্ধান ও সংগ্রহ করে সেই লিপিতে পাওয়া একই প্রকার ৩৫,০০০ শ্লোক নিয়ে মহাভারত গ্রন্থের একটি সটীক ও সমীক্ষাত্মক সংস্করণ প্রকাশ করলেন, ১৮ খণ্ড যুক্ত ১৩০০০ পৃষ্ঠার এই পুস্তকটি সমগ্র পৃথিবীর মানুষের কাছে সমাদৃত হল।অনুবাদকাশীদাসী মহাভারতের প্রথম পৃষ্ঠা*.বঙ্গানুবাদবাংলা ভাষায়মহাভারত সর্বপ্রথম কে অনুবাদ করেন, তা বলা জটিল। তবে, বাংলাতে সর্বাধিক জনপ্রিয় ও সুপ্রচলিত যে অনুবাদটি রয়েছে, তা সপ্তদশ শতকে ‘কাশীরাম দাস’ নামক এক কবি ‘পয়ার কাব্য ছন্দে’ রচনা করেছিলেন বলে জানা যায়।১৬শ শতকের শেষার্ধে কাশীরাম দাস বর্তমানবর্ধমান জেলারকাটোয়া মহকুমার অধীনে ইন্দ্রাণী পরগনার অন্তর্গত সিঙ্গী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।[২২]তাঁর পিতার নাম ছিল কমলাকান্ত। কাব্য রচনায় তাঁর পরিবারের সুনাম ছিল। তাঁর জ্যেষ্ঠভ্রাতা কৃষ্ণদাস ‘শ্রীকৃষ্ণবিলাস’ কাব্য রচনা করেন ও কনিষ্ঠ ভ্রাতা গদাধর ‘জগন্নাথমঙ্গল’ কাব্য রচনা করেন। কাশীরাম ছিলেন দেব-উপাধিধারী কায়স্থ। সম্ভবত তিনি সপ্তদশ শতকের প্রথমার্ধে বাংলা মহাভারত রচনা শুরু করেন। তবে বিশেষজ্ঞদের ধারণা, কাহিনির বিরাট পর্ব অবধি লিখবার পর তাঁর মৃত্যু হয়। এরপর তাঁর ভ্রাতুষ্পুত্র নন্দরাম সম্ভবত কাব্যের বাকি অংশ সম্পূর্ণ করেন। কাশীরাম মেদিনীপুরজেলার আওয়াসগড়ের রাজার শাসনাধীন স্থানে এক পাঠশালায় শিক্ষকতা করতেন। কাশীরামসংস্কৃতও কাব্যশাস্ত্রে সুপণ্ডিত ছিলেন, কিন্তু তিনি মূল সংস্কৃত মহাভারতের যথাযথ অনুবাদ না করে নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গির দ্বারা মূল কাহিনিকে কিছুটা বদলে রচনা করেছেন।চৈতন্য-পরবর্তী যুগে রচিত এই গ্রন্থে বৈষ্ণব কাশীরামের ভক্তিবাদের প্রাধান্য স্থানে স্থানে পরিলক্ষিত হয়েছে। সম্পূর্ণ গ্রন্থটি পয়ার চতুর্দশপদী ও ত্রিপদী ছন্দেলিখিত হয়েছে।[২৩]গ্রন্থটিতে কাশীরামের একটি জনপ্রিয় ভণিতা (পদের শেষে কবির নামযুক্ত পঙ্‌ক্তি) পাওয়া যায়:“মহাভারতের কথা অমৃত-সমান।কাশীরাম দাস কহে, শুনে পুণ্যবান্॥”কাশীরাম রচিত এই মহাভারকটিভারত-পাঁচালীবা ‘কাশীদাসী মহাভারত’ নামে বাংলায় সমাদৃত। এছাড়াওকালীপ্রসন্ন সিংহ,কবীন্দ্র পরমেশ্বরওশ্রীকর নন্দীরলেখা মহাভারতও বাংলায় প্রসিদ্ধি লাভ করেছে।*.অন্যান্য অনুবাদইংরেজি ভাষায়মহাভারত প্রথম অনুবাদ করেন কিশোরীমোহন গঙ্গোপাধ্যায়, মুনশিরাম মনোহরলাল প্রকাশনীতে ১৮৮৩ থেকে ১৮৯৬ সালের মধ্যে। গীতা প্রেসের পক্ষ থেকে পণ্ডিত রামনারায়ণদত্ত শাস্ত্রী পাণ্ডে রামহিন্দি ভাষায়মহাভারতের অনুবাদ করেছেন। অষ্টাদশ শতাব্দীতে সম্রাটআকবরেরপৃষ্ঠপোষকতায় ফয়জ়ি ও অাবদুল কাদির বদাউনিফারসি ভাষায়মহাভারত অনুবাদ করেন, যার নামকরণ করা হয় ‘রজ়্‌ম্নামেহ্’।তামিল ভাষায়মহাভারতের অনুবাদ করেছেন মানালুর রঙ্গচরিয়ার।আঞ্চলিক সংস্করণসময়ের সাথে সাথে মহাভারতের বিভিন্ন আঞ্চলিক সংস্করণ প্রকাশিত হয়, যাদের অধিকাংশের মধ্যেই মূল কাহিনীর সামান্য অদলবদল অথবা সমসাময়িক প্রচলিত কাহিনির সংযোজন করা হয়েছে। ভারতে মহাভারতের তিনটি পৃথক সংস্করণ পাওয়া যায় – উত্তর ভারতীয়, দক্ষিণ ভারতীয় ও মালাবারী। মালাবারী মহাভারত আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ২য় শতকে পরিপূর্ণতা লাভ করে। বাকি দু’টি সম্ভবত আরও কিছুকাল পরে পরিপূর্ণ হয়ে আধুনিক রূপ লাভ করেছে।মহাভারতের তামিল সংস্করণটি তেরুক্কুট্টু বা কাত্তৈক্কুট্টু নামে মঞ্চে অভিনীত হয়, এতে প্রধানত দ্রৌপদীর চরিত্রের ওপর অধিক গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। ভারতীয় উপমহাদেশের বাইরে,ইন্দোনেশিয়ায়একাদশ শতকেজাভাররাজা ধর্মবংশের পৃষ্ঠপোষকতায় ককবিন ভারতযুদ্ধ নামে মহাভারতের একটি সংস্করণ বিকশিত হয়, যেটি পরে বর্তমান হিন্দু প্রধান বালী দ্বীপে প্রসিদ্ধি লাভ করে। এর থেকে উদ্ভূত নৃত্যনাটক ওয়ায়াঙ্গ ওয়ঙ জাভা সংস্কৃতি ও সাহিত্যকে পুষ্ট করেছে। এই সংস্করণটি ভারতীয় সংস্করণ থেকে অতি স্বল্প পৃথক। উদাহরণ হিসেবে এতে দ্রৌপদীর পঞ্চস্বামী ছিলেন না, তাঁর বিবাহ শুধু যুধিষ্ঠিরের সাথেই হয়; শিখণ্ডীকে অর্জুনের স্ত্রী হিসেবে বর্ণিত হয়েছে, যিনিযুদ্ধে পুরুষদেহ না ধারণ করেই এক স্ত্রীযোদ্ধা হিসেবে অংশগ্রহণ করেন; আবার এতে গান্ধারীকে মহীয়সী নারী হিসেবে না দেখিয়ে এক খলচরিত্র হিসেবে দেখানো হয়েছে।এতে সেমর, পেত্রুক, গরেঙ্গ্ নামে কিছু চরিত্রসংযোজিত হয়েছে, যা মূল মহাভারতে নেই। মহাভারতের একটি অসম্পূর্ণ কাওয়ী সংস্করণ ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপে প্রাপ্ত হয়েছে।চলচ্চিত্র ও দূরদর্শনভারতে ১৯২০ সালের আগেও মহাভারত নিয়ে প্রচুর চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। ১৯৭৭ সালে দানবীর সূর কর্ণ নামে এক তেলুগু ছবি তৈরি করেন এন. টি. রাম রাও। ১৯৮০ সালে শ্যাম বেনেগাল পরিচালিত কলিযুগ ছবিটিও মহাভারতের কাহিনির ভিত্তিতে নির্মিত হয়। ২০১০ সালে প্রকাশ ঝাঁ মহাভারতের কাহিনির উপর আংশিক ভিত্তিতে তৈরি করেন রাজনীতি ছবিটি। ২০১৩ সালের অ্যানিমেটেড ফিল্ম ‘মহাভারত’ ভারতের সর্বাপেক্ষা ব্যয়বহুল অ্যানিমেটেড ছবি হিসেবে উৎকর্ষ লাভ করেছে।১৯৮০ সালে রবি চোপড়ার পরিচালনায় মহাভারত ধারাবাহিক ভারতের দূরদর্শনে সম্প্রচারিত হয়।বিনোদন জগতে মহাভারতের কিছু অসম্পূর্ণ প্রকল্প রয়ে গেছে রাজকুমার সন্তোষীর ছবিতেও সত্যজিৎ রায়ের পরিকল্পনায়।সামাজিক প্রভাবভগবদ্গীতায়শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে এক ক্ষত্রিয় ও যোদ্ধার পালনীয় কর্তব্যগুলি ব্যাখ্যা করেছেন, বেদান্ত দর্শন, কর্ম-জ্ঞান-ভক্তি ইত্যাদি নানা যোগের স্বরূপ উদাহরণ সহ বিবৃত করেছেন। এই কারণেই গীতাকেহিন্দু দর্শনেরসংক্ষিপ্তসার ও জীবনে চলার এক স্বয়ংসম্পূর্ণ নির্দেশিকা হিসেবে সমাদৃত করা হয়। আধুনিক কালেমহাত্মা গাঁধী,স্বামী বিবেকানন্দ,বাল গঙ্গাধর তিলকইত্যাদি মহান ব্যক্তিরা ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে জনগণকে জাগরিত করতে বহুবার গীতার শ্লোকগুলিকে উদ্ধৃত করে মানব আদর্শ হিসেবে তুলে ধরেছেন।