বৃহস্পতিবার, ২০ অক্টোবর, ২০১৬

বুদ্ধ দর্শন

প্রাপ্তিস্থান : ট্যাং ডাইন্যাষ্টি, চায়না। সময়কাল : ৬১৮ - ৯০৭ সাল
ছবি : আর্ট ইন্স্টিটিউট অব শিকাগো থেকে সংগৃহীত।
ধর্মপ্রচার নয়, বিভিন্ন ধর্মমত সম্পর্কে যৎসামান্য জানার প্রচেষ্টা মাত্র
গৌতম বুদ্ধের জন্ম ও সময়কাল নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতানৈক্য আছে। কারও কারও মতে বুদ্ধের সময়কাল ৫৬৩ খ্রীষ্ট পূর্বাব্দ হতে ৪৮৩ খ্রীষ্ট পূর্বাব্দ।
বুদ্ধের পিতৃদত্ত নাম সিদ্ধার্থ, সম্ভবত তাঁর গোত্রনাম গৌতম অথবা তাঁর পালিকা বিমাতা গৌতমীর নাম থেকেই গৌতম নামের উদ্ভব।
তাঁর পিতা ছিলেন শাক্যবংশীয় রাজা শুদ্ধোধন, মাতা মায়াদেবী।
বুদ্ধের জন্মস্থান : কপিলাবস্তুর সন্নিকটে লুম্বিনি নামক স্থানে (অধুনা নেপাল)।
কথিত আছে, মায়াদেবী পিতৃগৃহে যাবার সময় লুম্বিনি গ্রামের একটি বাগানে সিদ্ধার্থের জন্ম দেন। সিদ্ধার্থের জন্মের সাতদিন পরে মায়াদেবীর মৃত্যু হয় এবং সিদ্ধার্থ তাঁর বিমাতা গৌতমীর নিকট প্রতিপালিত হন।
সিদ্ধার্থের স্ত্রীর নাম ছিল যশোধরা, মতান্তরে যশোধা বা গোপা এবং পুত্রের নাম ছিল রাহুল।
কথিত আছে, সিদ্ধার্থ একদিন তাঁর সহিস চন্নের (মতান্তরে ছন্দক) সাথে ঘুরতে বেরিয়ে একজন জরাগ্রস্থ বৃদ্ধকে দেখলেন, একজন রোগগ্রস্থ দুর্বল ব্যক্তিকে দেখলেন এবং একটি শবযাত্রা দেখলেন যার অনুগামীগণ বিলাপরত ছিলেন। তিনি বিষয়গুলি সম্পর্কে চন্নের কাছে জানতে চাইলেন। চন্ন তাঁকে জানালেন এটাই স্বাভাবিক জীবন ধর্ম। আরেকদিন চন্নের সাথে বেরিয়ে তিনি পীতবস্ত্র পরিহিত একজন প্রসন্নচিত্ত সন্ন্যাসীকে দেখলেন। তাঁর সম্পর্কে জানতে চাইলে চন্ন জানালেন, এই সন্ন্যাসীটি মানব কল্যানের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন।
এবিষয়গুলো সিদ্ধার্থের অন্তর ছুঁয়ে যায়। দুঃখ, জরা, মৃত্যু ইত্যাদি বিষয়গুলো তাকে ভাবিত করে তোলে।
ঊনত্রিশ বছর বয়সে তিনি বিবাগী হয়ে সংসার ত্যাগ করেন। প্রথমে তিনি আরাল কালাম (মতান্তরে আলারা) নামক একজন শাস্ত্র বিশেষজ্ঞের কাছে যান, সেখানে তিনি সন্তোষজনক উত্তর না পেয়ে উদ্দক নামক আরেক পন্ডিতের কাছে যান। তাঁর কাছেও তিনি মনপুত উত্তর না পেয়ে সঠিক জ্ঞান লাভের নিমিত্ত বৌদ্ধগয়ায় পর্যায়ক্রমে ছয় বৎসরকাল কঠোর তপস্যার মাধ্যমে বোধিজ্ঞান লাভ করেন।
সিদ্ধার্থ তপস্যাকালে অনাহারের কারণে অত্যন্ত কৃশ হয়ে পড়েছিলেন। সে সময়ে তিনি অনশন ভঙ্গ করে সুজাতা নাম্নী এক নারীর কাছ থেকে এক পাত্র পরমান্ন আহার করেছিলেন। অতঃপর তিনি নদীতে স্নান করে পুনরায় ধ্যানরত হন। সে কারণে যে পাঁচ জন তপস্যাসঙ্গী মনঃক্ষুন্ন হয়ে সিদ্ধার্থকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন, ছত্রিশ বছর বয়সে বোধিজ্ঞান লাভ করার পর তিনি ঋষিপত্তন মৃগদাবে সর্বপ্রথম তাঁর দর্শন প্রচার করেন সেই পাঁচ জন ভিক্ষুর মাঝে। যাঁরা ছিলেন, বুদ্ধের প্রথম শিষ্যত্ব গ্রহনকারী পঞ্চ বর্গীয় শিষ্য। তাঁরা হলেন, কৌন্ডিন্য, বপ্প, ভদ্দিয়, মহানাম এবং অশ্বজিৎ। পরবর্তিতে তিনি আরও অনেককে দীক্ষাদান করেন।
ইতিহাস পর্যালোচনায় পাওয়া যায় ৪৯০ খ্রীষ্ট পূর্বাব্দের কাছাকাছি সময়ে কোশলরাজ প্রসেনজিতের পাটরানী মল্লিকাদেবী বৌদ্ধ ধর্মের প্রতি অনুরক্ত ছিলেন। মল্লিকাদেবীর প্রিয় সখী বিশাখা বুদ্ধের প্রতি শ্রদ্ধার নিদর্শন স্বরূপ সহস্র প্রকোষ্ঠের একটি সাততলা বিশাল বিহার 'পূর্বারাম মৃগার মাতা প্রাসাদ' বুদ্ধদেবকে দান করেছিলেন (রাহুল সাংকৃত্যায়ন, ভোলগা থেকে গঙ্গা)।
এ সময়ে জৈবলী, উদ্দালক এবং যাজ্ঞবল্ক্য প্রভৃতি ঋষিগণ ব্রহ্মবাদ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তাঁদের মতবাদ প্রচার করছিলেন।
সমসাময়িক কালে 'অজিত কেশকম্বল' নামে এক গৃহত্যাগী ব্রহ্মচারী যিনি ছিলেন একেবারেই জড়বাদী, তিনি ভৌতিক (জড়) পদার্থ ছাড়া আত্মা, ঈশ্বরভক্তি, নিত্য-তত্ত্ব অথবা স্বর্গ-নরক-পুনর্জন্মবাদ মানতেন না।
তিনি বলতেন, 'আত্মা, ঈশ্বর ইত্যাদি নিত্য বস্তু পৃথিবীতে নেই। সর্ব বস্তুই উৎপন্ন হয় এবং অচিরেই বিলীন হয়ে যায়। সংসার কতগুলি বস্তুর প্রবাহ নয়, বরং ঘটনাবলীর স্রোত।' তাঁর প্রচারিত মতবাদ জ্ঞানীরা খুবই যুক্তিসঙ্গত ও হৃদয়গ্রাহী মনে করতেন। কিন্ত ঐ অনাদিবাদে লোক-মর্যাদা, ধনী-গরীব, দাস-স্বামীর প্রভেদ নষ্ট হয়, তাই অজিতের জড়বাদ সামন্ত ও ব্যবসায়ীদের প্রিয় হতে পারলোনা (রাহুল সাংকৃত্যায়ন, ভোলগা থেকে গঙ্গা)।
গৌতম বুদ্ধ নিজের অনাত্মবাদ ও জড়বাদের মধ্যে আরও কিছু যোগ করে তার তিক্ততা কিছুটা দূর করলেন। তাঁর মতে আত্মা নিত্য না হলেও চেতনা-প্রবাহ স্বর্গ কিম্বা নরকের মানুষের মধ্যে এক দেহ হতে আরেক দেহে--- এক শরীর-প্রবাহ হতে আরেক শরীর-প্রবাহে সঞ্চারিত হয় (রাহুল সাংকৃত্যায়ন, ভোলগা থেকে গঙ্গা)। তৎকালে কোশলের নগরবধু আম্রপালী বুদ্ধের কাছে দীক্ষা নিয়ে ভিক্ষুণী হয়েছিলেন। তিনি তাঁর বিশাল প্রাসাদ সঙ্ঘকে দান করেছিলেন। তিনি ভিক্ষুণীসঙ্ঘের প্রধানাও হয়েছিলেন।
বৌদ্ধমতে দীক্ষা নিতে ত্রিশরণ মন্ত্রোচ্চারণ করতে হয়।
(১) বুদ্ধং শরণম গচ্ছামি ( আমি বুদ্ধের শরণ নিলাম)।
(২) ধম্মং শরণম গচ্ছামি ( আমি ধর্মের শরণ নিলাম)।
(৩) সঙ্ঘং শরণম গচ্ছামি ( আমি সঙ্ঘের শরণ নিলাম)।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন