শনিবার, ২৯ অক্টোবর, ২০১৬

বেদ না ভাগবত?


মঙ্গলবার, ২ আগস্ট, ২০১৬
ভাগবতে বেদে প্রত্যাবর্তনের নির্দেশ

বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম তথা বিভিন্ন সাইটে কিছু নামধারী মূর্খ বৈষ্ণবদের লক্ষ্য করা যায়। এদের কাজ হলো মানুষকে বেদের পথ থেকে সরিয়ে আনা। যার ফলস্বরূপ সকাল সন্ধ্যা এদের মুখ দিয়ে বেদ নিন্দার ফূলঝুরি ছোটে। বেদ নিয়ে বিভিন্ন অশ্লীল লেখা এরা পোষ্ট করে। বেদের মধ্যে খোজে অশ্লিলতা। যদিও এরা নিজেদের নামে সনাতনি টাইটেল ব্যবহার করে। আদৌ এরা সনাতনি কি না সে ব্যাপারে যথেষ্ঠ সন্দেহ আছে। মজার বিষয় হলো এরা নিজেদের ভাগবত পাঠি বলে মনে করে।
ভাগবত কে বেদের চেয়েও সর্বোচ্চ গ্রন্থ বলে স্বীকার করে। কিন্তু এরা জীবনে ভাগবত পড়া তো দূরে থাক ভাগবত চোখে দেখেছে কি না সন্দেহ।কারন ভাগবত যদি তারা অধ্যয়ন করতো তবে বেদ নিয়ে অশ্লিল কথাবার্তা তো দূরে থাক। বেদ নিয়ে খারাপ চিন্তা মাথাই আনার আগে সহস্রবার ভাবতো।
এই লেখায় আমরা দেখবো বেদ সম্পর্কে ভাগবতের অভিমত কি?
রাজা নিমিকে কর্মোযোগ সমন্ধে উপদেশকালে শ্রীআবির্হোত্র স্বীকার করেছেন যে, বেদ অপৌরষেয় অর্থাৎ ঈশ্বরস্বরূপ এবং এর অর্থ বোঝা সুকঠিন -
.
★ ভাগবত ১১।৩।৪৩
কর্ম (শাস্ত্র বিহিত) অকর্ম (নিষিদ্ধ) এবং বিকর্ম (বিহিতের উলক্ষন) এর বিচার বেদ দ্বারাই সম্ভব। লৌকিক রীতিতে এর ব্যবস্থা হয় না। বেদ অপৌরষেয় অর্থাৎ ঈশ্বরস্বরূপ। তাই বেদের তাৎপর্য অবশ্যই সুকঠিন কার্য। অতি বিদ্বান ব্যক্তিগন বেদের অভিপ্রায় নির্ণয় করতে ভূল করে থাকেন।
.
এসব নামধারী বৈষ্ণবরা এবার একটু বেশী বুঝে বলবে যে, বেদে স্বর্গাদি প্রাপ্তির জন্য বিভিন্ন পুষ্পিত বাক্যে প্রলোভন দেখানো হয়েছে। যেসবে আমরা মোহিত হই না। এর উত্তর স্বয়ং ভাগবত নিজেই দিয়েছেন -
.
★ ভাগবত ১১।৩।৪৪
এই বেদ পরোক্ষবাদাত্মক অর্থাৎ শব্দার্থ অনেক স্থলে তাৎপর্যের মার্গ দর্শন করে না। বেদ কর্ম নিবৃত করণহেতু কর্মের বিধান দেয়। বালককে মিষ্টির লোভ দেখিয়ে যেমন ঔষধি সেবন করানো বিধেয়। তেমনই বেদ অনভিজ্ঞদের স্বর্গাদির প্রলোভনে তাদের শ্রেষ্ঠ কর্মে প্রবৃত্ত করে।
.
★ ভাগবত ১১।৩।৪৬
অতএব ফলের অভিপ্রায় ত্যাগ করে এবং বিশ্বাত্মা ভগবানকে কর্মফল নিবেদন করে যে বেদোক্ত কর্মানুষ্ঠান করে তার কর্ম নিবৃতিতে অপ্রাপ্ত জ্ঞানরূপ সিদ্ধি লাভ হয়। বেদে স্বর্গাদি ফল লাভের বর্ণনা শব্দাদির সত্যতার মধ্যে সীমিত নয়। তার কর্মে রূচি উৎপন্ন করবার জন্যই।
.
এখানে স্পষ্ট যে, বেদে স্বর্গাদির বর্ণনা তাদেরই জন্য যারা বেদে অনভিজ্ঞ। তাদের বেদের পথে আনার জন্যই এরূপ বর্ণনা।
এখন বেদের বিভক্তি এবং মূখ্য বিষয় কি তা নিয়ে একটু আলোচনা করা যাক। এ বিষয়ে শ্রীকৃষ্ণ স্পষ্ট বলছেন-
.
★ ভাগবত ১১।২।৩৫
হে উদ্বব! বেদ সকল কর্ম, উপাসনা ও জ্ঞান এই তিন কান্ডে বিভক্ত। তিন কান্ডে প্রতিপাদিত মূখ্য বিষয় হলো ব্রহ্ম ও আত্মার একাত্ম। মন্ত্রসকল ও মন্ত্রদ্রষ্টা ঋষিগন এই বিষয় কে মূক্ত কন্ঠে ঘোষনা না করে গুপ্তভাবে বলেছেন। আমারো তাই অভিষ্ট।
.
★ ভাগবদ ১১।২।৩৬
বেদসকল বস্তত শব্দব্রহ্ম। তারা আমার প্রতিমূর্তি। তাই তার রহস্য বোঝা অত্যন্ত কঠিন কর্ম। সেই শব্দব্রহ্ম পরা, পশ্যন্তি ও মধ্যমা বাণীরূপে প্রাণ, মন এবং ইন্দ্রীয়ময়। তা সমুদ্রবৎ সুবিশাল এবং গভীর। তার নাগাল পাওয়া কঠিন।
.
অথচ এসব নামধারী বৈষ্ণবরা অতি সহজেই বেদ বুঝে ফেলে। আর সেই সাথে অশ্লিলতার ঢোল বাজিয়ে দিবা সূর্যের অস্ত ঘটায়।
এখন বেদ কিভাবে এবং কার কাছ থেকে অভিব্যক্ত হয়েছে সে বিষয়ে শ্রীকৃষ্ণ আলোকপাত করছেন-
.
★ভাগবত ১১।২১।৩৮,৩৯
ভগবান হিরণ্যগর্ভ স্বয়ং বেদমূর্তি এবং অমৃতময়। প্রাণ তার উপাধি এবং স্বয়ং অনাহত শব্দ দ্বারাই তার অভিব্যক্তি হয়েছে। যেমন উর্ণনাভ নিজ মুখ দ্বারা জাল বিস্তার করে আবার তা গিলে ফেলে। তেমনভাবেই তিনি স্পর্শাদি বর্ণসকল সংকল্পকারী মনরূপ নিমিত্ত করণ দ্বারা হৃদয়াকাশ থেকে অপার অনন্ত বহু মার্গ সম্পন্ন বৈখরীরূপ বেদ বাণীকে স্বয়ং অভিব্যক্ত করেন।
.
স্পষ্ট হলো যে বেদ স্বয়ং ঈশ্বর থেকেই ব্যক্ত হয়েছে। যা সম্পূর্ণ ঈশ্বরীয় জ্ঞান। আর এরা ঈশ্বরীয় জ্ঞানে অশ্লিলতা খোজে। এর থেকে বড় মূর্খামী আর কিছু হতে পারে না।
এখন দেখার বিষয় এই যে, কেউ যদি বেদের নির্দেশিত পথ না মানে। এবং খেয়াল খুশিমত ধর্মের আচরন করে তার গতি কি হবে-
.
★ ভাগবত ১১।৩।৪৫
যার অজ্ঞান নিবৃত্ত হয় নি, ইন্দ্রীয়সকল বশীভূত নয় সে যদি খেয়াল খুশি মতো বেদোক্ত কর্মের আচরন পরিত্যাগ করে তাহলে সে বেদ বিহিত কর্ম না করার জন্য বিকর্মরূপ অধর্ম করেই করে। তাই সে পুনঃমৃত্যু অর্থাৎ পুনঃ পুনঃ জন্ম চক্রে আবর্তিত হতে থাকে।
.
অর্থাৎ এ শ্লোকে এটা স্পষ্ট হয়েছে যে, বেদ বিহিত কর্ম যদি কেউ না করে তবে তা নিশ্চিত রূপে অধর্ম।
এ কথা অজামিলের উপাখ্যানে যমদূতরা ও স্বীকার করে বলেছেন, "যা বেদ বিহিত তাই ধর্ম, আর যা বেদ নিষিদ্ধ তাই অধর্ম।। ভাগবত ৬।১।৪০" এবং সে পুনর্জন্মের চক্রের বার বার আবর্তিত হবে। শুধু তাই নয় সে যদি

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন