শনিবার, ২৯ অক্টোবর, ২০১৬

সৃষ্টিতত্ত্ব ভাগবত,দ্বিতীয় অংশ

১। আইনষ্টাইনের ব্যাপক আপেক্ষিক তত্ত্ব (Einstein’s Law of Relativity)
২। বিগব্যাঙ্গ থিওরী (Big Bang Theory)
৩। বিগ ক্রাঞ্চ (Big Crunch Theory)
৪। বুদবুদ তত্ত্ব (Bubbles Theory)
৫। কণাবাদীতত্ত্ব (Quantum Theory)
৬। মানবতত্ত্ব নীতি (Anthropic Principle) ক) দুর্বল মানবতত্ত্ব নীতি (Weak Anthropic Principle)
খ) সবল মানবতত্ত্ব নীতি (Strong Anthropic Principle) এই নীতিগুলি সম্বন্ধে ভাগবতে বিস্তারিত আলোচনা করা হইয়াছে । দেখা গিয়াছে বেশিরভাগ নীতির মধ্যে সামঞ্জস্য নাই । আজ বিজ্ঞানী সমাজের সামনে একটি চ্যালেঞ্জ, মহাবিশ্ব সম্বন্ধে একটি ঐক্যবদ্ধ সম্পূর্ণ তত্ত্ব আবিষ্কার করা এবং আমরা যে বিশ্বে বসবাস করি তাহার একটি সম্পূর্ণ বিবরণ দেওয়া ।

নোবেল পুরস্কার বিজয়ী বিজ্ঞানী স্টিফেন ডব্লূ হকিং তাঁহার A Brief History of Time (কালের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস) বইটিতে আবেদন করেছেন ভবিষ্যতে হয়ত আমাদের চেয়ে বুদ্ধিমান মানুষের আগমন ঘটবে যারা মহাবিশ্ব সম্পর্কে একটি পূর্ণাঙ্গ বিবরণ প্রদান করতে পারবে । আমার মতে ভাগবত (বৈদিক শাস্ত্র) মানুষের সেই আদিম ইচ্ছাকে পূরণ করিতে পারবে । ভাগবতে বিশ্বব্রহ্মান্ড বা মহাবিশ্বের গঠন সম্বন্ধে অত্যন্ত পূর্ণাঙ্গ ও গঠনমূলক বর্ণনা করেছে যদি সেইসব বর্ণনা পূর্ণাঙ্গভাবে উল্লেখ করা হয় তা হলে একটি বৃহৎ গ্রন্থে রূপ নিবে সেইজন্য অত্যন্ত সংক্ষেপে কিছু উল্লেখ করা হল যারা বিশ্বব্রহ্মান্ড সৃষ্টি রহস্য পূর্ণাঙ্গভাবে জানতে চান তাদেরকে ভাগবত পড়িতে হবে । ভাগবতের আলোকে মহাবিশ্বের সৃষ্টি রহস্য উপলব্ধি করতে হলে আমাদের কয়েকটি বিষয় সম্বন্ধে ধারণা নিতে হইবে ।

জড় জগত (Material World) আমরা যে জগতে বাস করি তাকে জড় জগত বলে । এই জগত জড় অর্থাৎ প্রাণহীন, ইহার সৃষ্টি ও ধ্বংস আছে । এই সৃষ্টি ও ধ্বংস কার্যক্রম চক্রাকারে চলিতে থাকে অর্থাৎ প্রথমে সৃষ্টি হয় তারপর কিছুদিন অবস্থান করে, কিছুদিন পর আবার ধ্বংস হয় । সুতরাং জড় জগতের সৃষ্টি, অবস্থান এবং ধ্বংস শাশ্বত নিয়মে নির্দিষ্ট সময় পর পর ঘটিতেছে । এইভাবে বিচার করিলে দেখা যায়, জড় জগতের সৃষ্টি ও ধ্বংস শাশ্বত ইহার কোন শুরু বা শেষ নাই ।

জড় জগত পুণঃপুণঃ সৃষ্টি ও ধ্বংস হয় ----

সর্বভূতানি কৌন্তেয় প্রকৃতং যান্তি মামিকাম্ ।
কল্পক্ষয়ে পুনস্তানি কল্পানি কল্পাদৌ বিসৃজাম্যহম্ ।।
প্রকৃতিং স্বামবষ্টভ্য বিসৃজামি পুনঃ পুনঃ ভূতগ্রামমিমং কৃৎস্নমবশং প্রকৃতের্বশাৎ ।। (ভাগবত ২/১০/৩)

অনুবাদ কল্পান্তে সম্পূর্ণ সৃষ্টি, যথা জড় জগত এবং প্রকৃতিতে ক্লেশ প্রাপ্ত জীব আমার দিব্য দেহে লয় প্রাপ্ত হয় এবং নতুন কল্পের আরম্ভে আমার ইচ্ছার প্রভাবে তাহারা পুণরায় প্রকাশিত হয় । এ ভাবে প্রকৃতি আমার নিয়ন্ত্রনে পরিচালিত হয় । আমার ইচ্ছার প্রভাবে তাহা পুণঃপুণঃ প্রকট হয় এবং লয় হয় ।

স এষ আদ্যঃ পুরুষঃ কল্পে কল্পে সৃজত্যজঃ ।
আত্মাত্মন্যাত্মনাত্মানং স সংযচ্ছতি পাতি চ ।। (ভাগবত ২/৬/৩৯)

অনুবাদ
সেই আদিপুরুষ পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ জন্মরহিত হওয়া সত্ত্বেও প্রথম অবতার মহাবিষ্ণু রূপে নিজেকে বিস্তার করিয়া এই ব্যক্ত জগতের সৃষ্টি করেন । তাঁহার মধ্যেই অবশ্য সৃষ্টি প্রকাশিত হয় এবং জড় পদার্থ ও জড় অভিব্যক্তি সবই তিনি স্বয়ং কিছুকালের জন্য তিনি তাহাদের পালন করেন এবং তারপর তিনি পুণরায় তাহাদের আত্মসাৎ করিয়া নেন । উপরের শ্লোক দুইটি থেকে বুঝা যায় জড়জগত পুণঃপুণঃ সৃষ্টি এবং ধ্বংস হচ্ছে । আমরা জড় জগতের একটি ব্রহ্মান্ডের মধ্যে অবস্থিত পৃথিবী নামক গ্রহে বসবাস করিতেছি । এরকম অনন্তকোটি ব্রহ্মান্ড নিয়া বিশ্ব ব্রহ্মান্ড গঠিত । ইহাকে জড়জগত বলে ।

ব্রহ্মান্ডের সংখ্যা --------

ক্ষিত্যাদিভিরেষ কিলাবৃতঃ সপ্তভির্দশগুণোত তরৈরন্ডকোশঃ । যত্র পতত্যণুকল্পঃ সহস্রকোটিকোটিভি স্তদনন্তঃ ।। (ভাগবত ৬/১৬/৩৭)

অনুবাদ
প্রতিটি ব্রহ্মান্ড মাটি, জল, আগুন, বায়ু, আকাশ, মহতত্ত্ব এবং অহংকার এই সাতটি আবরণের দ্বারা আচ্ছাদিত এবং প্রতিটি আবরণ পূর্ববর্তী থেকে দশগুন অধিক । এই ব্রহ্মান্ডটি ছাড়া আরও কোটি কোটি ব্রহ্মান্ড রহিয়াছে এবং সেইগুলি আপনার মধ্যে পরমাণুর মতো পরিভ্রমণ করিতেছে । তাই আপনি অনন্ত নামে প্রসিদ্ধ ।

এই শ্লোকে বর্ণনা করা হইয়াছে ব্রহ্মান্ডের সংখ্যা কোটি কোটি । জড় জগত সম্বন্ধে আধুনিক বিজ্ঞানের ধারণা সঠিক । কারণ বিজ্ঞানে বলা হয়েছে কোটি কোটি গ্রহ নক্ষত্র লইয়া এই মহাবিশ্ব বা বিশ্বব্রহ্মান্ড গঠিত ।

ব্রহ্মান্ড কতগুলি গ্রহ, নক্ষত্র, সূর্য, চন্দ্র নিয়ে একটি ব্রহ্মান্ড গঠিত হয় ।যেমন – আমাদের সৌর পরিবারের সাথে আরো কিছু গ্রহ নক্ষত্র যোগ করিলে আমাদের ব্রহ্মান্ড গঠিত হয় ।ভাগবতে বর্ণনা করা হয়েছে প্রত্যেকটি ব্রহ্মান্ডের একটি নির্দিষ্ট আয়তন এবং আবরণ রয়েছে।প্রতিটি ব্রহ্মান্ডের ব্যাসের গভীরতা আলাদা আলাদা ।যেমন –আমাদের ব্রহ্মান্ডেরর ব্যাস

শ্রীশুক উবাচ এতাবানেব ভূবলয়স্য সন্নিবেশঃ।
প্রমাণলক্ষণতো ব্যাখ্যাতঃ॥(ভাগবত ৫/২১/১)

অনুবাদ
শুকদেব গোস্বাম

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন