শনিবার, ২৯ অক্টোবর, ২০১৬

ভাগবতের সৃষ্টি তত্ত্ব

ভাগবতের আলোকে মহাবিশ্বের সৃষ্টি রহস্য -পর্ব ০১

ভাগবতের আলোকে কোয়ান্টাম থিওরী (Quantum Theory) -
ভাগবতে মহাবিশ্বের যে পূর্ণাঙ্গ বর্ণনা প্রদান করিয়াছে কোয়ান্টাম তত্ত্ব সেটার অংশ বিশেষ । ভাগবতের আলোকে কোয়ান্টাম তত্ত্ব এখানে আলোচনা করা হল । পরমাণুর সংজ্ঞা -

চরমঃ সদ্বিশেষাণামনেকোহসংযুতঃ সদা ।
পরমাণুঃ স বিজ্ঞেয়ো নৃণামৈক্যভ্রমো যতঃ ।। (ভাগবত ৩/১১/১)

অনুবাদ - জড় জগতের যে ক্ষুদ্রতম অংশ অবিভাজ্য এবং দেহরূপে যাহার গঠন হয় না, তাহাকে বলা হয় পরমাণু । তাহা সর্বদা তাহার অদৃশ্য অস্তিত্ব নিয়ে বিদ্যমান থাকে, এমনকি প্রলয়ের পরেও । জড় দেহ এই প্রকার পরমাণুর সমণ্বয়, কিন্তু সাধারন মানুষের সেই সম্বন্ধে ভ্রান্ত ধারনা রয়েছে । এই শ্লোকে পরমাণুর সংজ্ঞা প্রদান করা হইয়াছে । এ বিষয়ে আমরা পরবর্তী পোষ্টে আলোচনা করব ।মহাবিশ্ব পরমাণু দ্বারা গঠিত -

সত এব পদার্থস্য স্বরূপাবস্থিতস্য যৎ ।
কৈবল্যং পরমমহানবিশেষো নিরন্তর ।।(ভাগবত ৩/১১/২)

অনুবাদ - পরমাণু হইতেছে ব্যক্ত জগতের চরম অবস্থা । যখন তাহারা বিভিন্ন প্রকারের শরীর নির্মাণ না করিয়া তাহাদের স্বরূপে স্থিত থাকে, তখন তাহাদের বলা হয় পরম মহৎ ।ভৌতিক রূপে নিশ্চয়ই অনেক প্রকারের শরীর রহিয়াছে, কিন্তু পরমাণুর দ্বারা সমগ্র জগৎ সৃষ্টি হয় । এই শ্লোকে বর্ণনা করা হইয়াছে, পরমাণু দ্বারা জগত গঠিত যাহা কোয়ান্টাম তত্ত্বে বলা হইয়াছে । ভগবান পরমাণু থেকে বিশাল ব্রহ্মান্ড সব জায়গায় বিরাজিত -

পরমাণুপরমমহতো-সত্বমাদ্যন্তান্তরবর্তী ত্রয়বিধুরঃ ।
আদাবন্তেহপি চ সত্ত্বানাং যদ্ ধ্রুবং তদেবান্তরালেহপি ।।(ভাগবত ৬/১৬/৩৬)

অনুবাদ - এই জগতে পরমাণু থেকে শুরু করিয়া বিশাল ব্রহ্মান্ড এবং মহত্তত্ত্ব পর্যন্ত সব কিছুরই আদি, মধ্য এবং অন্তে আপনি বর্তমান রহিয়াছেন । অথচ আপনি আদি, মধ্য এবং অন্ত রহিত সনাতন । এই তিনটি অবস্থাতেই আপনার অবস্থা উপলব্ধি করা যায় বলিয়া আপনি নিত্য । যখন জগতের অস্তিত্ব থাকে না, তখন আপনি আদি শক্তিরূপে বিদ্যমান থাকেন । এই শ্লোকে বর্ণনা করা হইয়াছে প্রলয়ের সময় পরমাণু ধ্বংস হইয়া শক্তিতে পরিণত হয়, আবার যখন সৃষ্টি শুরু হয় তখন শক্তি থেকে পরমাণু সৃষ্টি হয় । পরবর্তী পোষ্টে আমি আলোচনা করব সৃষ্টির শুরুতে গর্ভোদক নামক শক্তি থেকে সবকিছু সৃষ্টি হয় ।কোয়ান্টাম তত্ত্বে বর্ণনা করা হইয়াছে শক্তি হইতে পরমাণু সৃষ্টি হয়েছে কিন্তু শক্তি আসল কোথা থেকে ? এই প্রশ্নের উত্তরে বিজ্ঞানীরা বলেছেন এই মহাবিশ্বে সর্বমোট শক্তির পরিমাণ ০ (শূন্য) । এই প্রশ্নের সাথে এই উত্তরের কি সামঞ্জস্য তা আমি উপলব্ধি করতে পারছি না । আমাদের প্রশ্ন শক্তি আসল কোথা থেকে ? তার উত্তরে বলল, মহাবিশ্বের সর্বমোট শক্তির পরিমাণ শূন্য । কিভাবে এই সমস্যার সমাধান হল তা আমি উপলব্ধি করতে পারছি না । শক্তি কোথা হইতে আসিল-

শাস্ত্রে তা এভাবে প্রদান করিয়াছে
একোহপ্যসৌ রচয়িতুং জগদন্ডকোটিং যচ্ছক্তিরস্তি
জগদন্ডচয়া যদন্তঃ
অন্ডান্তরস্থপরমাণুচয়ান্তরস্থং
গোবিন্দমাদি পুরুষং তমহং ভজামি ।। (ব্রহ্ম সংহিতায় ৫/৩৫)

অনুবাদ – আমি পরমেশ্বর ভগবান গোবিন্দের ভজনা করি, যিনি তাঁহার এক অংশের দ্বারা প্রতিটি ব্রহ্মান্ড এবং প্রতিটি পরমাণুতে প্রবিষ্ট হইয়াছেন, এইভাবে তিনি সমগ্র সৃষ্টিতে তাঁহার অনন্ত শক্তির প্রকাশ করিয়াছেন ।

এই শ্লোকে বর্ণনা করা হইয়াছে ভগবানের শক্তি পরমাণুতে প্রবেশ করিবার ফলে সৃষ্টি কার্যক্রম শুরু হয় অর্থাৎ পরমাণু ভগবানের শক্তি থেকে সৃষ্টি হয় । শক্তি আসিল কোথা থেকে তার উত্তর শাস্ত্রে বলা হয়েছে, শক্তি ভগবান থেকে এসেছে । পরে আমি ব্রহ্মান্ড সৃষ্টি পর্বে আলোচনা করব এই মহাবিশ্ব প্রধান নামক একটি চিন্ময় বা বিপরীত পদার্থ থেকে সৃষ্টি হয়েছে । সুতরাং বলা যায় পরমাণু চিন্ময় বা বিপরীত পদার্থ থেকে সৃষ্টি হয়েছে যা বিজ্ঞানীদের ধারণা । সুতরাং বলা যায় বৈজ্ঞানিকেরা যে অসম্পূর্ণ কণাবাদী তত্ত্ব (Quantum Theory) আবিষ্কার করেছেন ভাগবত সেটাকে আরো পূর্ণাঙ্গভাবে প্রকাশ করিয়াছে ।

বৈদিক মহাবিশ্ব সৃষ্টি রহস্য (The Vedic Concept of Creation of the whole Universe)

মহাবিশ্ব আসিয়াছে কোথা থেকে এবং যাচ্ছে বা কোথায় ? মহাবিশ্বের কি কোন শুরু ছিল ? যদি থাকিয়া থাকে তবে তাহার আগে কি ঘটেছিল ? কালের চরিত্র কি ? কাল কি কখনও শেষ হবে ? আমি কে ? কোথা হইতে আসিয়াছি ? কোথায় যাব ? আমি এরূপ প্রশ্ন করিতেছি কেন ? এ সকল মানুষের শাশ্বত প্রশ্ন এর সঠিক উত্তর জানবার জন্য বিজ্ঞানীরা বহুদিন যাবৎ গবেষণা করিতেছে । এসব বিষয় নিয়ে অসংখ্য বিজ্ঞানী গবেষণা করিয়াছেন এবং এখনো করছে । তাহারা ইতিমধ্যে মহাবিশ্ব সৃষ্টি রহস্য বিষয়ে অনেক তত্ত্ব, মতবাদ, হাইপোথিসিস, সূত্র আবিষ্কার করেছেন । বিজ্ঞানীদের অনেক আবিষ্কার আছে পরস্পর বিরোধী একটির সাথে অন্যটির মিল নেই । মহাবিশ্ব সৃষ্টি রহস্য বিষয়ে যে সকল মতবাদ বিজ্ঞানীরা গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করিতেছে সেইগুলি নিম্নে প্রকাশ করা হইল ।

১। আইনষ্টাইনের ব্যাপক আপ

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন